এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও স্বীকৃত মৌলের সংখ্যা 118টি। একজন নবীন বিজ্ঞানী বা শিক্ষানবিস রসায়নবিদের পক্ষে। পৃথকভাবে সব মৌলের গঠন, ধর্ম ও ব্যবহার সম্পর্কে জানা অসম্ভব। দেখা যায় বেশ কিছু মৌল যেমন Li Na K Rb, Cs-এর ধর্মের ক্ষেত্রে যেমন সাদৃশ্য একইভাবে F, CI, Br, I-এর ধর্মের ক্ষেত্রেও ভিন্ন কিন্তু নিজেদের মধ্যে একইরূপ সাদৃশ্য বর্তমান। এভাবে প্রায় একই ধর্মসম্পন্ন মৌলসমূহকে একই শ্রেণিভুক্ত করে সব মৌলকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাজানো হয়েছে পর্যায় সারণিতে। ইলেকট্রন বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে মৌলের ধর্মাবলির পরিবর্তন ও পুনরাবৃত্তি ঘটে। এ ধর্মসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইলেকট্রন আসক্তি, তড়িৎ ঋণাত্মকতা, আয়নিকরণ বিভব, পরমাণুর আকার, ধাতব ধর্ম, গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক ইত্যাদি। একই মৌলের একাধিক পরমাণু বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে মৌলিক অণু, আবার ভিন্ন ভিন্ন মৌলের দুই বা ততোধিক পরমাণু যৌগের অণু সৃষ্টি করে।
L(+)__________(-) Y
M(+)_________(-) Y
N(+)_________(-) Y
P. Q. R ও ৪ চারটি মৌলের পরমাণু ক্রমাঙ্ক যথাক্রমে 9. 10. 17 ও 20 .
জানা মৌলগুলোর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করার উদ্দেশ্যে উনবিংশ শতাব্দী থেকে বিজ্ঞানীদের চেষ্টার শেষ নেই। শুরুতে মৌলগুলোকে ধাতু ও অধাতু এ দুভাগে ভাগ করা হলো। এ ভাগ বেশিদিন টিকে নাই। কারণ এমন কিছু মৌল পাওয়া গেল যাদের মধ্যে ধাতু ও অধাতু এ দুই ধারনের ধর্মই বর্তমান। যেমন – কঠিন (গ্রাফাইড), সিলিকন, আর্সেনিক ইত্যাদি মৌল। এর পর মৌলগুলোকে তার যোজনীর উপর ভিত্তি করে সাজানোর চেষ্টা করা হলো। প্রাথমিকভাবে ভালোই হলো কিন্তু পরবির্ততেই মহাবিপদ এসে হাজির হলো।
সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী মৌলগুলো একই গ্রুপে এসে হাজির হলো। লিথিয়াম (Li), সোডিয়াম (Na), পটাসিয়াম (K) এর মতো তীব্র
তড়িৎ ধনাত্মক বিজারক মৌলগুলোর সাথে ফ্লোরিন (F), ক্লোরিন (CI), ব্রোমিন (Br) এর মতো তীব্র তড়িৎ ঋণাত্মক জারক মৌলগুলোর একই গ্রুপে জায়গা হলো। বিজারক মৌলের ধর্মের সাথে জারক মৌলের ধর্ম সম্পূর্ণ ভিন্ন। ১৮৯২ সালে বিজ্ঞানী জে. ডাবলু, ডোবেরিনার (J W. Dobereiner) তার ত্রয়ী সূত্র প্রদান করেন। তাঁর প্রস্তাবনা অনুযায়ী মৌলগুলোকে তিন তিনটি করে ভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। একই শ্রেণির মৌলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের যথেষ্ট সাদৃশ্য পাওয়া গেল। বিভক্ত ত্রয়ীগুলো ছিল এ ধরনের
প্রথম জয়ী Li Na K I
দ্বিতীয় ত্রয়ী Cl, Br,
তৃতীয় জয়ী Fe Co Ni
বিজ্ঞানির এ চেষ্টাও সফল হলো না। মাত্র গুটি কয়েক মৌলের ক্ষেত্রে এ ধারণা প্রযোজ্য হয়। প্রধান সমস্যা হলো তখন অনেক মৌলই আবিষ্কার হয় নাই।
১৮৬২ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী ডি স্যান কোর্টোইজ (De Chan Courtois) মৌলগুলো খাড়া করে এমনভাবে সাজানোর চেষ্টা করেন যেন মৌলের অবস্থানগত উচ্চতা মৌলের পারমাণবিক ভরের সমাণুপাতিক হয়। মৌলের এ ধরনের বিন্যাস টেলুরিক ক্রু (Tellurie
Screw) নামে পরিচিত। এ প্রচেষ্টা সফল না হলেও আধুনিক পর্যায় সারণির পথের সন্ধান খুঁজে পাওয়া গেল। এ প্রচেষ্টার ফলে
বেড়িয়ে এলো একই ধরনের ধর্মবিশিষ্ট মৌলগুলো পরস্পরের ঠিক উপরে ও নিচে অবস্থান করছে। ১৮৬৪ সালে বিজ্ঞানী জন নিউল্যান্ডস্ (John Newlands) মৌলগুলোকে পারমাণবিক ভরের উপর ভিত্তি করে সাজানোর চেষ্টা করেন। তিনি দেখান, পর্যায় তালিকায় প্রথম মৌলের ধর্মের সাথে অষ্টম মৌলের ধর্মের যথেষ্ট মিল আছে। একইভাবে দ্বিতীয় মৌলের সাথে নবম মৌলের, তৃতীয় মৌলের সাথে দশম মৌলের ধর্মের মিল আছে। এ নিয়মকে নিউল্যান্ডের অষ্টক সূত্র (Law of Octaves) বলা হয়।
এক্ষেত্রে H ও F এর ধর্মের সাদৃশ্য, Li ও Na এর ধর্মের সাদৃশ্য, Be ও Mg এর ধর্মের সাদৃশ্য, B ও Al এর ধর্মের সাদৃশ্য, C ও Si এর ধর্মের সাদৃশ্য, N ও P এর ধর্মের সাদৃশ্য, OS এর ধর্মের সাদৃশ্য, E ও Cl এর ধর্মের সাদৃশ্য ছিল বিশেষভাবে দেখার মতো। নতুন নতুন মৌলের আবিষ্কারের কারণে এ চেষ্টা সফল হলো না। মজার বিষয় হলো তখন পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় মৌলগুলোর আবিষ্কার হয়নি।
১৮৬৯ সালে বিজ্ঞানী লুথার মেয়ার ( Lother Meyer) প্রস্তাব করেন নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে মৌলগুলো তাদের ধর্মের পর্যায়ক্রমিক আবর্তন ঘটে। তিনি দেখান যে, মৌলগুলোর পারমাণবিক আয়তন ওদের পারমাণবিক ভরের সাথে পর্যায়ক্রমে পরিবর্তিত হয়।
কোনো মৌলের পারমাণবিক আয়তন=মৌলটির পারমাণবিক ভর ℅মৌলটির আপেক্ষিক গুরুত্ব
তিনি মৌলগুলোকে ওদের পারমাণবিক ভরের বিপরীতে পারমাণবিক আয়তনের লেখচিত্র অঙ্কন করেন। কিছু সমস্যা হলো কঠিন
অবস্থায় অনেক মৌলের আপেক্ষিক গুরুত্ব সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব হয় না। বহুরূপী মৌল যেমন C,SSP এদের ক্ষেত্রে আরো বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হলো। ঠিক একই সময়ে (১৮৬৯) রাশিয়ান বিজ্ঞানী দ্রিমিত্রি মেন্ডেলিফ (Dmitri Mendeleev) মৌলগুলোর পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজানোর ক্ষেত্রে পর্যায় সূত্র প্রকাশ করে। তিনি প্রস্তাব করেন – “ মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের ক্রমবর্ধমান
পারমাণবিক ভরের সাথে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।” অর্থাৎ মৌলগুলোকে তাদের পারমাণবিক ভরের উচ্চক্রম অনুসারে সাজালে
দেখা যায় নির্দিষ্ট দূরত্বের পর প্রায় একই ধর্ম সম্পন্ন মৌলের আবির্ভাব ঘটে। তিনিই প্রথম মৌলগুলোকে পর্যায় ও গ্রুপ বা শ্রেণি
বরাবর ভাগ করেন। তিনি মৌলগুলোকে সাতটি পর্যায় ও আটি শ্রেণি হিসেবে ভাগ করেন।
মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির বেশ কিছু ত্রুটি দেখা যায়। যেমন- আইসোটোপের স্থান, হাইড্রোজেনের স্থান, একই ধর্ম সম্পন্ন মৌলের ভিন্ন গ্রুপে স্থান এবং ভিন্ন ধর্ম সম্পন্ন মৌলের একই গ্রুপে স্থান এ ধরনের বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়ায় এ পদ্ধতির কার্যকারিতা
বিনষ্ট হয়ে যায়।
বিশেষ করে ল্যান্থানাইড ও অ্যাকটিনাইড সিরিজের ক্ষেত্রে আরো বেশি অসুবিধার দেখা যায়। ষষ্ঠ পর্যায়ের মৌল ল্যান্থানাইড, La(57) এর সাথে পরবর্তী ১৪টি মৌলকে ( 58-71 পর্যন্ত) একই স্থানে স্থান দেয়া হয়েছিল। কিন্তু একই স্থানে ১৫টি মৌলকে স্থান দেয়া সম্ভব নয়। এ কারণে ল্যান্থানাইড সিরিজের ১৫টি মৌলকে মূল পর্যায় সারণির নিচে স্থান দেয়া হয়।
একইভাবে ৭ম পর্যায়ের মৌল অ্যাকটিনাইড, Ac(89) এর সাথে পরবর্তী আরো ১৪টি মৌল (90–103 পর্যন্ত) একই স্থানে স্থান দেয়া হয়েছে। ল্যান্থানাইড সিরিজের মৌলের মতো এদেরকেও অ্যাকটিনাইড সিরিজ নাম দিয়ে মূল পর্যায় সারণির নিচে রাখা হয়। মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির এত সব ত্রুটির কারণে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন, মৌলসমূহকে পারমাণবিক ভরের উপর ভিত্তি করে সাজানো সম্ভব নয়। নিশ্চিয়ই মৌলের পরমাণুর গঠনভিত্তিক এমন কোনো উপাদানের মূখ্য ভূমিকা আছে যার প্রভাবে মৌলসমূহের মধ্যে পর্যায়ভিত্তিক ধর্ম প্রকাশ পেয়ে থাকে। ১৯১৩ সালে বিজ্ঞানী জে. মোসলে (J. Mosley) তার X-ray পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, মৌলসমূহের ধর্মাবলি তাদের পরমাণুর প্রোটন সংখ্যার উপর নির্ভরশীল। তখন সব বিজ্ঞানী স্বীকার করেন যে, পর্যায় সারণির মূল ভিত্তি হচ্ছে পারমাণবিক সংখ্যা, পারমাণবিক ভর নয়। তাই আধুনিক পর্যায় সূত্রকে এভাবে বর্ণনা করলেন— "মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।” ১৯১৪ সালে বিজ্ঞানী নীলস বোর (Neils Bohr) আধুনিক দীর্ঘ পর্যায় সারণির কাঠামো তৈরি করেন। এ পর্যায় সারণিতে ১৮টি গ্রুপ ও আপাতত সাতটি
পর্যায় হিসেবে মৌলগুলোকে স্থান দেয়া হয়েছে।
আধুনিক পর্যায় সারণি :
পর্যায় সারণি মৌলগুলোকে সুনির্দিষ্ট স্থানে স্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন একটি বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা যে ব্যবস্থার মাধ্যমে আবিষ্কৃত মৌলগুলোকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে, একজন শিক্ষানবিস রসায়নবিদ স্বল্প সময়ের মধ্যে আবিষ্কৃত মৌলগুলো সম্পর্কে সঠিক ও পরিপূর্ণ ধারণা লাভ করতে পারেন। ইলেকট্রন বিন্যাসই পর্যায় সারণির মূলভিক্তি। আধুনিক পর্যায় সারণিতে মৌলগুলোকে পর্যায় ও গ্রুপ বরাবর ভাগ করা হয়েছে। আপাতত সাতটি পর্যায় ও আঠারোটি গ্রুপ বর্তমান।
পর্যায়গুলোকে ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম পর্যায় এভাবে ভাগ করা হয়েছে। গ্রুপগুলোকে 1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10, করার পর ঐ মৌলের সর্বশেষ ইলেকট্রনটি যে অরবিটালে প্রবেশ করবে মৌলটি ঐ ব্লকের মৌল। যেমন H মৌলের পরমাণুর
11, 12, 13, 14, 15, 16, 17 ও 18 এভাবে ভাগ করা হয়েছে। আধুনিক পর্যায় সারিতে মৌলগুলোকে আবার sp d ও f ব্লক এভাবেও ভাগ করা হয়েছে। মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস
ইলেকট্রনটি s অরবিটালে প্রবেশ করে বলে || মৌলটি s-ব্লকের অন্তরভুক্ত। Na মৌলের ১১তম ইলেকট্রনটি 3s অরবিটালে প্রবেশ করবে।
করে বিধায় Na মৌলটিও এ-ব্লকের মৌল। Ca মৌলের ২০তম ইলেকট্রনটি 4s অরবিটালে প্রবেশ করে বলে Ca মৌলটি এ-ব্লকের মৌল B মৌলের ৫ম ইলেকট্রনটি 2p অরবিটালে প্রবেশ করে বলে B p ব্লকের মৌল N মৌলের ৭ম ইলেকট্রনটি 2p অরবিটালে প্রবেশ করে বলে N মৌলটি p-ব্লকের মৌল। Sc মৌলের ২১তম ইলেকট্রনটি 3d অরবিটালে প্রবেশ করে বলে Sc d-ব্লকের মৌল। Fe মৌলের ২৬তম ইলেকট্রনটি 3d অরবিটালে প্রবেশ করে বলে Fe d-ব্লকের মৌল।
পর্যায় তালিকার ও 2 গ্রুপের মৌলগুলো :-ব্লকের মৌল 1, 3, 14 15 16 17 18 তম গ্রুপের মৌলগুলো p-ব্লকের মৌল। 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9, 10, 11 12 তম গ্রুপের মৌলগুলো -ব্লকের মৌল। ল্যান্থানাম, La (57) এর পরবর্তি ১৪টি মৌল -ব্লকের মৌল। একইভাবে অ্যান্টেনিয়াম, Ac(89) এর পরবর্তি ১৪টি মৌল -ব্লকের মৌল। -ব্লকের মৌলগুলোকে ও নং গ্রুপের মৌলের
সাথে স্থান দেয়া হয়। যদি পর্যায় তালিকা আলাদাভাবে এ মৌলগুলোকে স্থান দেয়া হয়। পর্যায় তালিকার ১ম পর্যায়ে মাত্র দুটি মৌল, 1 ও He। ২য় পর্যায়ে মৌলের সংখ্যা ৮টি। ৩য় পর্যায়ে মৌলের সংখ্যা ৮টি। অর্থ পর্যায়ে মৌলের সংখ্যা ১৮টি। ৫ম পর্যায়ে মৌলের সংখ্যা ১৮টি। ৬ষ্ঠ পর্যায়ে মৌলের সংখ্যা ৩২টি। ৭ম পর্যায়েও মৌলর সংখ্যা
৩২টি। ল্যান্থানাম, La(57) সহ পরবর্তী আরো ১৪টি মৌল অর্থাৎ এ ১৫টি মৌলকে ল্যান্থানাইড সিরিজের মৌল বলা হয়। একইভাবে অ্যাক্টেনিয়াম, Ac( 89 সহ পরবর্তি আরো ১৪টি মৌল অর্থাৎ এ ১৫টি মৌলকে অ্যাক্টেনাইড সিরিজের মৌল বলা হয়। পর্যায় তালিকার ১নং গ্রুপের মৌলগুলোর মধ্যে H ভিন্ন বাকী মৌলগুলোকে ক্ষারধাতু বলা হয়। ২নং গ্রুপের মৌলগুলোকে মৃৎক্ষার ধাতু বলা হয়। ১৮তম গ্রুপের মৌরগুলোকে নবেল গ্যাস বলা হয়। He মৌলটি -ব্লক মৌল হলেও পর্যায় তালিকায় তার অবস্থান ১৮তম গ্রুপের মৌলের উপরে। কারণ He রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়।
প্রথম অষ্টক | H | Li | Be | B | C | N | O |
দ্বিতীয় অষ্টক | F | Na | Mg | Al | Si | P | S |
তৃতীয় অষ্টক | Cl | K | Ca | Cr | Ti | Mn | Fe |
ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিত্তিতে মৌলের শ্রেণিবিভাগ
ইলেকট্রন বিন্যাস অনুযায়ী মৌলসমূহকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যা নিম্নরূপ :
(১) -ব্লক মৌল,
(2) p-ব্লক মৌল,
কোনো মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসের শেষ ইলেকট্রনটি যে অরবিটালে প্রবেশ করবে তাকে ঐ ব্লকের মৌল ধরা হয়।
(৩) d-ব্লক মৌল,
(8) f-ব্লক মৌল
(১) -ব্লক মৌল
যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে শেষ ইলেকট্রনটি - অরবিটালে প্রবেশ করে সে সব মৌলকে এ-ব্লক মৌল বলে। পর্যায় সারণির 1. 2 শ্রেণির এবং He হলো -ব্লক মৌল। এ-ব্লক মৌলের মোট সংখ্যা মোট ১৪ টি। এসব মৌলের সর্ববহিঃস্তরে s' অথবা ' ইলেকট্রন
বিন্যাস থাকে। যেমন-
2
H ( 1 ) = 1s1
He( 2 ) = 1s2 Be(4) = 1s2 2s2
Li(3) = 1s2 2s1
Na(11) = [Ne] 3s K ( 19 ) = [Ar] 48
Mg(12) = [Ne] 3s
[[Ca( 20 ) = [Ar] 4s
(২) p-ব্লক মৌল
যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি p-অরবিটালে প্রবেশ করে তাদেরকে p-ব্লক মৌল বলে। পর্যায় সারণির 13.
14, 15, 16, 17 এবং 18 গ্রুপের He মৌল বাদে অবশিষ্ট মৌলসমূহ এ গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। p ব্লকে সর্বমোট 30 টি মৌল রয়েছে।
এসব মৌলের পরমাণুর সর্ববহিস্থ শক্তিস্তরে p' থেকে p" পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে। যেমন-
B( 5 ) = 1s2 2s 2p C(6) = 1s2 2s 2 2p 2
O(8)=1s 2s 2p F(9) = 1s2 2s 2p
8/49
N(7) 1s 2s 2p
Ne( 10 ) = 1s2 2s 2p"
(৩) d-ব্লক মৌল
যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি d অরবিটালে প্রবেশ করে তাদের d-ব্লক মৌল বলে। পর্যায় সারণির চতুর্থ পর্যায়ের স্ক্যানডিয়াম Sc( 21 ) থেকে জিঙ্ক, Zn ( 30 ) এবং পঞ্চম পর্যায়ের ইট্রিয়াম, Y (39) থেকে ক্যাডমিয়াম, Cdam হলো d-ব্লক
পর্যায় সারণি ও মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম
ওপেন স্কুল
এইচএসসি প্রোগ্রাম
মৌল। এছাড়া ষষ্ঠ পর্যায় ও সপ্তম পর্যায়ে d-ব্লক মৌল আছে। পর্যায় সারণির '3' থেকে গ্রুপ 12 এর মৌলসমূহ এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এ শ্রেণিতে সর্বমোট 40টি মৌল আছে। এ ব্লকের মৌলের পরমাণুর d থেকে d" পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে। যেমন-
Sc (21) • [Ar] 3d 4s 2 Ti(22) • [Ar] 3d 4s 2
Cr(24)- [Ar]a 3d 4s' Mn (25) → [Ar] 3d 4s 2
V ( 23 ) [Ar] 3d 4s 2
d-ব্লক মৌলসমূহের বিশেষ বিশেষ ধর্মের কারণে এদেরকে অবস্থান্তর মৌল বলে। সেসব d-ব্লক মৌলের সুস্থিত আয়নে d অরবিটাল ইলেকট্রন দ্বারা আংশিকভাবে পূর্ণ থাকে অর্থাৎ d' থেকে d" পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকে সেসব মৌলকে অবস্থান্তর মৌল বলে। তবে সকল অবস্থান্তর মৌল d-ব্লক মৌল হলেও সকল d-ব্লক মৌল অবস্থান্তর মৌল নয়। যেমন- Sc, Zn, Y. Cd, Zr, La, Ac ইত্যাদি d-ব্লক মৌল হলেও অবস্থান্তর মৌল নয়। কারণ এদের পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি (d- অরবিটালে প্রবেশ করে। তাই এরা d-ব্লক মৌল। কিন্তু এদের স্থায়ী আয়নের ইলেকট্রন বিন্যাসে আংশিক পূর্ণ d অরবিটাল না থাকায় এরা অবস্থান্তর মৌল নয়। Sc, Zn, Y, Cd, Zr, La, Ac ইত্যাদির স্থায়ী আয়ন হচ্ছে যথাক্রমে S Zn, Y, Cd", Zr, La" Ach এদের স্থায়ী আয়নগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাস হতে দেখা যায়, কোনো কোনো আয়নের d অরবিটালে ইলেকট্রন থাকে না। আবার কোনো কোনো মৌলের স্থায়ী আয়নের d অরবিটালটি ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে। তাই বলা যায়, সকল অবস্থান্তর মৌল d-ব্লক মৌল হলেও সকল d-ব্লক মৌল অবস্থান্তর মৌল নয়। এসব মৌলের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কতিপয় ধর্ম হলো (ক) এদের পরিবর্তনশীল যোজ্যতা থাকে, (খ) এরা রঙিন যৌগ গঠন করে (গ) প্রভাবক হিসেবে কাজ করে এবং (ঘ) জটিল যৌগ গঠন করে।
* শিক্ষার্থীর কাজ
Sc(21) এবং Zn(30) মৌল দুটি d-ব্লক মৌল হলেও অবস্থান্তর মৌল নয়। মৌল দুটির স্থিতিশীল আয়নের ইলেকট্রন বিন্যাস লিখে কেন অবস্থান্তর মৌল নয় তা ব্যাখ্যা করুন।
(8) f-ব্লক মৌল
যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি [-অরবিটালে প্রবেশ করে সেসব মৌলকে -িব্লক মৌল বলে। ল্যান্থানাইড (Lanthanides) এবং অ্যাকটিনাইড (Actimides) সিরিজের মৌলসমূহ । -ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। পর্যায় সারণির ষষ্ঠ পর্যায়ের ল্যান্থানাম, La(57) থেকে পরবর্তী লুটেসিয়াম, Lu (71) পর্যন্ত ১৫টি এবং অ্যাক্টিনিয়াম Ac(89) থেকে পরবর্তী লরেনসিয়াম, Lr( 103 ) পর্যন্ত ১৫টি সহ সর্বমোট 30টি মৌল এ ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। -ব্লক মৌলসমূহকে পর্যায় সারণির নিচে আলাদাভাবে দেখানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে -িব্লক মৌল হলো সেরিয়াম, Ce(58) হতে লুটেসিয়াম, Lu(71) এবং প্রোটেকটিনিয়াম, Pa( 91 ) থেকে লরেনসিয়াম, Lr(103) পর্যন্ত মোট 27টি। এসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে 1 থেকে 1" পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে। যেসব [-ব্লক মৌলের সুস্থিত আয়নে [- অরবিটাল আংশিকভাবে ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে অর্থাৎ " থেকে " পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকে তাদেরকে আন্তঃঅবস্থান্তর মৌল (inner transition) বলে।
শিক্ষার্থীর কাজ
C(6), F(9), P(15), Na( 11 ), Ni ( 28 ) Br (35), Ba 56 ) মৌলগুলো কোনটি পর্যায় সারণির কোন ব্লকে অবস্থিত তা নির্ণয় করুন।
সার-সংক্ষেপ
s-ব্লক মৌল যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে শেষ ইলেকট্রন টি s অরবিটালে প্রবেশ করে সে সব মৌলকে এ-ব্লক মৌল বলে। এসব মৌলের সর্ববহিঃস্তরে অথবা s ইলেকট্রন বিন্যাস থাকে।
P-ব্লক মৌল : যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি p-অরবিটালে প্রবেশ করে তাদেরকে p-ব্লক মৌল
বলে। p-ব্লকে সর্বমোট 30 টি মৌল রয়েছে। এসব মৌলের পরমাণুর সর্ববহিস্থ শক্তিস্তরে p' থেকে p" পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে।
• d-ব্লক মৌল যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি d অরবিটালে প্রবেশ করে তাদের d-ব্লক মৌল বলে।
এ শ্রেণিতে সর্বমোট 40টি মৌল আছে। এ ব্লকের মৌলের পরমাণুর d' থেকে all পর্যন্ত ইলেকট্রন থাকতে পারে। • -ব্লক মৌল যেসব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি অরবিটালে প্রবেশ করে সেসব মৌলকে f-এক মৌল
বলে। ল্যান্থানাইড (Lanthanides) এবং অ্যাকটিনাইড (Actinides) সিরিজের মৌলসমূহ [-ব্লকের অন্তর্ভুক্ত।
প্রকৃতিতে মৌলগুলোকে বিভিন্ন ব্লকে ভাগ করা হয়েছে যেমন s-ব্লক, p-ব্লক, d-ব্লক এবং f-ব্লক। প্রতিটি ব্লকের মৌলগুলো নির্দিষ্ট কিছু সাধারণ ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। এখানে প্রতিটি ব্লকের মৌলের সাধারণ ধর্মাবলি ব্যাখ্যা করা হলো:
S ব্লক মৌলের প্রকৃতিতে অবস্থান
(Occurance of s block elements in nature):
s ব্লক মৌলের অন্তর্ভুক্ত ক্ষার ধাতু ও মৃৎক্ষার ধাতু উভয়ই অতিশয় সক্রিয় বলে প্রকৃতিতে এদের মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। এদেরকে যৌগ অবস্থায় বিশেষ করে ক্ষার ধাতুর অক্সাইড, হ্যালাইড ও সিলিকেট হিসাবে এবং মৃৎক্ষার ধাতুগুলোকে কার্বনেট, সালফেট, ফসফেট ও সিলিকেট হিসাবে পাওয়া যায়। ক্ষার ধাতুর মধ্যে প্রকৃতিতে সোডিয়াম (Na) এর পরিমাণ প্রায় 2.83% যার অবস্থান প্রাপ্তির দিক থেকে সপ্তম। পটাসিয়াম (K) এর
পরিমাণ 2-59% যার অবস্থান প্রাপ্তির দিক থেকে অষ্টম। ভূত্বকের ওজন হিসাবে ক্যালসিয়াম (Ca) এর অবস্থান ৫ম ও
ম্যাগনেসিয়াম (Mg) এর অবস্থান ৬ষ্ঠ। ভূত্বকের সোডিয়াম (Na) এবং পটাসিয়াম (K) এর পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি হলেও সমুদ্রের পানিতে NaCl এর পরিমাণ 2-8%
সমুদ্রের পানিতে পটাসিয়াম (K) এর পরিমাণ মাত্র 0-8%। কারণ দ্রবীভূত আকরিক থেকে ভূগর্ভের পানিতে যে পরিমাণ পটাসিয়াম
পাওয়া যায় তার অধিকাংশ উদ্ভিদ তার প্রয়োজনের তাগিদে শোষণ করে নেয়। কিন্তু Na আয়ন সমুদ্রের পানিতে চলে যায়। সমুদ্রের পানি, লবণ হ্রদ এবং লবণের খনিতে Na ও Mg কে যৌগ হিসেবে পাওয়া যায়।
S ব্লক মৌলের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধর্ম
ক্ষার ধাতুর বৈশিষ্ট্য।
(১) তড়িৎ ধনাত্মক ধর্ম (Electropositive character) ক্ষার ধাতুগুলোর যোজ্যতা স্তরে ইলেকট্রন বিন্যাস ns'। ইত্যাদি।
এখানে n = 2, 3, 4
এরূপ ইলেকট্রন গঠন কাঠামোর জন্য ক্ষার ধাতুগুলোর আয়নিকরণ বিভবের মান খুব কম। এরা একটি মাত্র ইলেকট্রনকে ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ কারণে ক্ষার ধাতুগুলো প্রত্যেকেই তীব্র তড়িৎ ধনাত্মক মৌল। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় তড়িৎ ধনাত্মকতা ধর্ম ততই বাড়তে থাকে। গ্রুপ I এর নিচের দিকের ক্ষার ধাতুগুলোর ইলেকট্রন ত্যাগের প্রবণতা এত বেশি যে আলোর উপস্থিতিতেই এরা ইলেকট্রন ত্যাগ করে থাকে। এ কারণে K ও Cs ধাতুকে ফটোইলেকট্রিক সেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
(২) গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক (Melting points and boiling points) ক্ষার ধাতুগুলোর গলনাঙ্ক ও স্ফুটন 11/49
নিম্ন। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় ধাতুগুলোর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কের মান তত কম স্ফুটনাঙ্কের মানের হ্রাসের কারণ ধাতুগুলোর কেলাস ল্যাটিসের বন্ধন দুর্বল হওয়ায় এরা নরম প্রকৃতির হয়। এ .. পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষে একটি মাত্র ইলেকট্রন থাকার কারণে এদের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ যথেষ্ট বড় হয় এবং পরমাণুর আকারও বড় হয়। এর ফলে পরমাণুর মধ্যে বন্ধন শক্তি দুর্বল প্রকৃতির হয়। ধাতুর পরমাণুর আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে বন্ধনে অংশগ্রহণ করেনি।
এরূপ ইলেকট্রনের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। এ কারণে ঐ ইলেকট্রনগুলো দ্বারা পরমাণুর মধ্যে পারস্পরিক বিকর্ষণ বলও বৃদ্ধি পায়। ফলে গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক মানের হ্রাস ঘটে। গ্রুপের উপর থেকে নিচের দিকে যত যাওয়া যায় পারস্পরিক বিকর্ষণ বলের মানের তত বৃদ্ধি ঘটে এবং গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক মানের হ্রাস ঘটে। এ কারণে ক্ষার ধাতুর ১ম মৌল Li এর গলনাঙ্ক 186°C হলেও Cs এর গলনাঙ্ক 28.5°C 1
(৩) আয়নিকরণ বিভব ( lonisation potential) ক্ষার ধাতুগুলোর সর্ববহিঃস্থ কক্ষে অরবিটালে একটি মাত্র ইলেকট্রন বর্তমান
থাকে। অর্থাৎ এদের যোজ্যতা স্তরে ইলেকট্রন বিন্যাস '। এখানে, n = 2, 3, 4. ইত্যাদি। ক্ষার ধাতুগুলোর পরমাণুর আকার যথেষ্ট বড় হওয়ার কারণে সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বল কমে
যায়। ফলে সর্ববহিঃস্থ কক্ষের ns! ইলেকট্রনকে অপসারিত করতে কম শক্তি প্রয়োজন হয়। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে যত যাওয়া যায় আয়নিকরণ বিভবের মান তত কমতে থাকে। কারণ নতুন শক্তিস্তর যুক্ত হওয়ার কারণে সর্ববহিঃস্থ কক্ষের ইলেকট্রন নিউক্লিয়াস থেকে দূরে সরে যায়। এর ফলে সর্ববহিঃস্থ কক্ষের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ কমে যায়। কম
শক্তি ব্যয় করেই ইলেকট্রনকে অপসারণ করা সম্ভব হয়। ক্ষার ধাতুগুলোর ১ম আয়নিকরণ বিভবের মান নিম্ন হলেও ২য় আয়নিকরণ বিভবের মান অতি উচ্চ। কারণ
(i) M' আয়নের সুস্থিত ইলেকট্রন বিন্যাস।
(ii) M আয়নের অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র আকার।
(iii) নিউক্লিয়াসের কার্যকরী ধনাত্মক চার্জের বৃদ্ধি, ক্ষার ধাতুর ২য় আয়নিকরণ বিভবের মানকে অতি উচ্চ করে তোলে।
(৪) পারমাণবিক ব্যাসার্ধ (Atomic radious) ক্ষার ধাতুগুলো পারমাণবিক ব্যাসার্ধ পর্যায় তালিকায় অন্যান্য গ্রুপের মৌলের
পারমাণবিক ব্যাসার্ধের তুলনায় যথেষ্ট বড়। পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রুপ এর মৌলগুলোর ক্ষেত্রে নতুন নতুন
শক্তিস্তরের সৃষ্টি হয়। যোজ্যতাস্তরের ভিতরের স্তরগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভিতরের স্তরগুলো সিন্ডিং করার ক্ষমতা সামগ্রিকভাবে বেড়ে যায়। এ কারণে গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে পারমাণবিক ব্যাসার্ধের বৃদ্ধি ঘটে
মনে রাখবেন-
গ্রুপ। এর মৌল ক্ষার ধাতুগুলো সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে একটিমাত্র ইলেকট্রন বর্তমান থাকে। যোজ্যতাস্তরের পাশাপাশি নিম্নতর স্তরের s ও p অরবিটাল ইলেকট্রন দ্বারা অষ্টক পূর্ণতা থাকে। অবশ্য Li এর ক্ষেত্রে He এর মতো দুটি ইলেকট্রন বর্তমান থাকে। ক্ষার ধাতুগুলোর যোজ্যতা স্তরের পাশাপাশি নিম্নতর শক্তিস্তরের ns up" ইলেকট্রনীয় গঠন কাঠামো বিদ্যমান থাকায় তাঁর সিন্ডিং প্রভাব দ্বারা ক্ষার ধাতুর যোজ্যতা স্তরের একমাত্র ইলেকট্রনকে তার নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বল থেকে আড়াল করে রাখে। ফলে ক্ষার ধাতুর যোজ্যতা ইলেকট্রনটি তার পরমাণু নিউক্লিয়াস থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে অবস্থান করতে পারে। যোজ্যতান্তরের ইলেকট্রনটি নিউক্লিয়াসের সাথে অনেকটাই হালকাভাবে যুক্ত থাকে। ক্ষার ধাতুর পূর্ববর্তী গ্রুপ 18তম গ্রুপের মৌল নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলোর ক্ষেত্রে ইলেকট্রন দ্বারা একটি শক্তিস্তর অষ্টক অপূর্ণ হওয়ার পর ক্ষার ধাতু মৌল গ্রুপের মৌলের শেষ ইলেকট্রনটি। তার পরবর্তী এবং অপেক্ষাকৃত বড় আকারের নতুন শক্তিস্তরে প্রবেশ করে। ফলে মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ তথা পরমাণুগুলোর আয়তনের বৃদ্ধি ঘটে। এ কারণে গ্রুপ এর মৌলগুলোর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ ও আয়তন পর্যায় সারণির অন্যান্য গ্রুপের মৌলের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ ও আয়তনের তুলনায় বড় হয়।
(৫) ধাতব ধর্ম (Metallic Character) H ব্যতীত গ্রুপের মৌলসমূহ প্রকৃত অর্থেই আদর্শ ধাতু। এ ধাতুগুলো ঘাতসহ, নমনীয়, তাপ ও বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। এদের ছুরি বা চাকু দিয়ে সহজেই কাটা যায়। অর্থাৎ এরা নরম প্রকৃতির। গ্রুপের উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় মৌলের ধাতন প্রকৃতি তত বেড়ে যায়। কারণ গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে যত আসা যায় মৌলগুলোর আকার তত বেড়ে যায় ও আয়নিকরণ বিভবের মান তত কমে যায় এবং ধাতব ধর্ম বেড়ে যায়।
(6) প্যারাচুম্বকত্ব ও ভারাচুম্বকত্ব ধর্ম ক্ষার ধাতুগুলো প্রত্যেকেরই যোজ্যতা স্তরে অরবিটালে একটিমাত্র
nis' ইলেকট্রনীয় গঠন কাঠামো প্রাপ্ত থাকে। এখানে n = 2, 3, 4..... ইত্যাদি। যোজ্যতা অরে
12/49
অযুগ্মভাবে অবস্থান করায় ক্ষার ধাতু প্যারাচুম্বকত্ব ধর্ম সম্পন্ন হয়।
ক্ষার ধাতু তার যোজ্যতাস্তরে ns' ইলেকট্রনটিকে দান করে M" আয়নে পরিণত হয়। M' আয়নটি ক্ষার ধাতুটি যে পর্যায়ে অবস্থান করে ঠিক তার পূর্ববর্তী পর্যায় নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রনীর গঠনকাঠামো প্রাপ্ত হয়। M' আয়নের পারমাণবিক অরবিটালের কোনো অযুগ্ম ইলেকট্রন না থাকায় এটি ডায়াচুম্বকত্ব ধর্ম প্রদর্শন করে। অর্থাৎ চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয় না।
(7) নরম ধাতু । ক্ষার ধাতুগুলো নরম প্রকৃতির। সহজেই ছুরি বা চাকু দ্বারা কাটা যায়। ক্ষার ধাতুগুলোর পারমাণবিক আয়তন হওয়ার জন্য এদের মধ্যে ধাতব বন্ধনশক্তি খুবই দুর্বল প্রকৃতির হয়। ফলে ক্ষার ধাতু নরম প্রকৃতির হয়। গ্রুপের উপর থেকে যত নিচে যাওয়া যায় পারমাণবিক আকারের তত বৃদ্ধি ঘটে এবং ধাতব বন্ধন দুর্বল হতে থাকে। ধাতুর নরম প্রকৃতি বৃদ্ধি পেতে থাকে ।
Li থেকে Na, Na থেকে K এবং K থেকে Rb বেশি নরম প্রকৃতির হয়।
(১) বিজারণ ধর্ম (Reducing Property) ক্ষার ধাতুর মৌলগুলোর ক্ষেত্রে গ্রুপ বরাবর উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় পারমাণবিক আকার তত বাড়তে থাকে। ফলে বিজারণ ক্ষমতাও বাড়তে থাকে। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে আয়নিকরণ বিভবের মান কমতে থাকে। এ কারণে Cs হলো তীব্র বিজারক এবং Li হলো সবচেয়ে দুর্বল বিজারক ।
মৃৎক্ষার ধাতুর বৈশিষ্ট্যসমূহ :
ক্ষার ধাতুগুলোর ন্যায় মৃৎক্ষার ধাতুগুলোও যথেষ্ট সক্রিয়। এ কারণে এদেরকে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। বিভিন্ন যৌগ হিসাবে
বিশেষ করে সিলিকেট, কার্বনেট, সালফেট ও ফসফেট হিসাবে প্রকৃতিতে এদের পাওয়া যায়। প্রকৃতিতে পরিমাণ হিসাবে Ca এর
অবস্থান পঞ্চম ও Mg এর অবস্থান ষষ্ঠ। মৃৎক্ষার ধাতুগুলো সাদা ধূসর বর্ণের হলেও বায়ুর সংস্পর্শে এসে এদের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। এরা ঘাতসহ, নমনীয় এবং এদের ধাতব
দ্যুতি আছে। ক্ষার ধাতু অপেক্ষাও মৃৎক্ষার ধাতুগুলো দৃঢ় প্রকৃতির ও অপেক্ষাকৃত শক্ত । (i) বিজ্ঞারণ ধর্ম (Reducing property) করে ধাতুর তুলনায় মৃৎক্ষার ধাতুগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল বিজারক গ্রুপ বরাবর
উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় এদের বিজারণ ধর্ম তত বৃদ্ধি পায়। মৃৎক্ষার ধাতুগুলো যোজ্যতা স্তরে অরবিটালের 2টি ইলেকট্রনকে দান করে ধনাত্মক বিযোজী আয়নে পরিণত হয়।
M-M² + 2e
(ii) পারমাণবিক ও আয়নিক ব্যাসার্ধ মৃৎক্ষার ধাতুগুলো পারমাণবিক ও আয়নিক ব্যাসার্ধ ক্ষার ধাতুর তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট।
মৃৎক্ষার ধাতুগুলোর ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াস দ্বারা অধিকমাত্রায়
আকর্ষিত হয়। পারমাণবিক আয়তনের হ্রাস ঘটে। আয়নিক ব্যাসার্ধের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জের পরিমাণ 2 একক
বৃদ্ধি পাওয়ায় এ মানের আরও অধিক হ্রাস ঘটে। এ মান ক্ষার ধাতুর তুলনায় ছোট।
(iii) আয়নিকরণ বিভব ক্ষার ধাতুর তুলনায় মৃৎক্ষার ধাতুগুলোর আয়নিকরণ বিভবের মান অপেক্ষাকৃত বেশি। এদের অপেক্ষাকৃত ছোট আকার ও কম পারমাণবিক ব্যাসার্ধের কারণে আয়নিকরণ বিভবের মানের বৃদ্ধি ঘটে। মৃৎক্ষার ধাতুর দ্বিতীয় আয়নিকরণ বিভবের মান ক্ষার ধাতুর তুলনায় বেশী।
উদাহরণস্বরূপ : ক্ষারধাতু Na এর ১ম আয়নিকরণ বিভবের মান 495.8 kmol হলেও মৃৎক্ষার ধাতু Mg ১ম আয়নিকরণ বিভবের মান 737-7kJ mol"। তবে মৃৎক্ষার ধাতুর ২য় আয়নিকরণ বিভবের মান ক্ষার ধাতুর তুলনায় যথেষ্ট নিম্ন। Mg হয় আয়নিকরণ বিভবের মান 1450 kJ. mol হলেও Na ২য় আয়নিকরণ বিভবের মান 4562 kl molt (iv) শিখা পরীক্ষায় বর্ণ মৃৎক্ষার ধাতুগুলোর মধ্যে বেরিলিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ব্যতীত অন্যান্য ধাতুগুলো এবং তাদের উদ্বায়ী লবণ বিশেষ করে ধাতব ক্লোরাইড শিখা পরীক্ষায় বিভিন্ন বর্ণের শিখা প্রদর্শন করে থাকে।
P ব্লক মৌলের রাসায়নিক ধর্ম
পর্যায় তালিকায় গ্রুপ 13 থেকে গ্রুপ 18 পর্যন্ত মৌলসমূহ p ব্লক মৌল। এদের রাসায়নিক ধর্মের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য
পরিলক্ষিত
হয়। ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এক এক গ্রুপের মৌলের রাসায়নিক ধর্ম এক এক রকম। তবে একই গ্রুপের মৌলের ধর্মের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাদৃশ্য
দেখা যায়।
13তম গ্রুপের মৌলের রাসায়নিক ধর্ম। (Chemical Properties of Group-13 Elements):
B ব্যতীত এ গ্রুপের অন্যান্য মৌলগুলো ধাতব প্রকৃতির। তাই এরা তড়িৎ ধনাত্মক মৌল। 13তম গ্রুপের উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় মৌলের তড়িৎ ধনাত্মক ধর্ম তত বাড়তে থাকে। মৌলগুলো যৌগ গঠনের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই +3 জা অবস্থা প্রদর্শন করলেও + 1 জারণ অবস্থাও প্রদর্শন করে থাকে।
13তম গ্রুপের মৌল B এর ক্ষুদ্র পারমাণবিক আকার, ক্ষুদ্র আয়নিক ব্যাসার্ধ, উচ্চ আয়নিকরণ বিভব ও যোজ্যতা স্তরে d অরবিটালের অনুপস্থিতির কারণে B সমযোজী প্রকৃতির যৌগ গঠন করে থাকে। এমনকি অতিশয় তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল X এর সাথে যুক্ত হয়ে (BX)) বোরন ট্রাই হ্যালাইড এর ক্ষেত্রে B সমযোজী বন্ধন সৃষ্টি করে থাকে।
(i) অ-জেনের সাথে উচ্চ তাপমাত্রা 13 তম গ্রুপের মৌলগুলো অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে ওদের ট্রাইঅক্সাইড যৌগ M, O,
গঠন করে।
উচ্চ তাপমাত্রা 2M₂O,(8)
4M(s) + 30 (g)
এখানে, M = B Al Ga In Th গ্রুপ বরাবর যত উপর থেকে নিচের দিকে যাওয়া যায় অক্সিজেনের প্রতি মৌলের সক্রিয়তা ততই 15 / 49 ALO GO, উভধর্মী, In, O, ক্ষারীয় এবং TI-O, তীব্র ক্ষারধর্মী। গ্রুপের উপর থেকে নিচের দিকে অক্সাইড যৌগের অনুধর্ম কমতে থাকে এবং ক্ষার ধর্ম বাড়তে থাকে।
(ii) নাইট্রোজেনের সাথে : উচ্চ তাপমাত্রায় 13 তম গ্রুপের মধ্যে শুধু B ও Al নাইট্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে বোরন BN ও অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড AIN গঠন করে।
Ga, N, Tiমৌল তিনটি 13তম গ্রুপের মৌল হলেও এরা N এর সাথে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। এ মৌল তিনটি +3 জারন অবস্থা থেকে +1 জারণ অবস্থা অধিকতর স্থায়ী।
উৎপন্ন নাইট্রাইড যৌগসমূহ সমযোজী প্রকৃতির হওয়ায় ওরা আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে হাইড্রোক্সাইড যৌগ ও NH, গ্যাস উৎপন্ন করে।
BN(s) + 3H2O ( 7 ) → B(OH),, HBO, + NH (g) AIN(s)+3HO(/) Al(OH),+2NH (g)
(iii) হ্যালোজেনের সাথে গ্রুপ-13 মৌলগুলো হ্যালোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে MX, সাধারণ সংকেতযুক্ত হ্যালাইড যৌগ উৎপন্ন
করে।
2M(5)+3X2 →2MX (s)
2B+3X: 2BX (XF, Cl, Br) 2A1+3X2 → 2AIX (এখানে X = F. Cl Br I )
গ্রুপ-13 নিচের দিকের মৌল Ga In T1 মৌল তিনটি +3 জারণ অবস্থা অপেক্ষা +1 জারণ অবস্থা অধিক স্থায়ী বিধায় এরা মনো
হ্যালাইড যৌগ গঠন করে। হ্যালাইড যৌগগুলোর মধ্যে ফ্লোরাইড যৌগগুলোর বন্ধন প্রকৃতি আয়নিক ও উচ্চ গলনাঙ্ক বিশিষ্ট। ব্যতিক্রম বোরন। ক্লোরাইড, ক্লোরাইড, আয়োডাইড যৌগ সমযোজী প্রকৃতির ও নিম্ন স্ফুটনাঙ্কবিশিষ্ট। বোরন হ্যালাইডগুলো সমযোজী প্রকৃতির বলে এরা তড়িৎ অপরিবাহী, পানিতে অদ্রবণীয় এবং জৈব দ্রাবকে দ্রবণীয়।
14তম গ্রুপের মৌলের রাসায়নিক ধর্ম :
(১) অ·িজেনের সাথে 14তম গ্রুপের মৌল অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে দুই ধরনের অক্সাইড যৌগ গঠন করে।
(i) মনো-অক্সাইড যৌগ (MO); যেমন- CO, SiO, GeO, SnO, Pho (ii) ডাই-অক্সাইড যৌগ (MO); যেমন- CO. SO, GeO. SO,
ডাই অক্সাইডগুলোর মধ্যে CO অম্লধর্মী SiO--কম অম্লধর্মী। GeO- খুবই সামানা অম্লধর্মী, SnO ও PhO, উভধর্মী অক্সাইড।
(২) হাইড্রোজেনের সাথে লেড (Pb) ভিন্ন 14তম গ্রুপের মৌলগুলো হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে MH যৌগ গঠন করে
থাকে। হাইড্রাইড যৌগের ক্ষেত্রে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে MH অণু গঠিত হয়।
গ্রুপ 15 মৌলসমূহ
নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), আর্সেনিক (As), অ্যান্টিমনি (Sh), বিসমাথ (Bi) মৌলগুলো পর্যায় তালিকায় 15 তম গ্রুপের
মৌল। পর্যায় সারণির 15তম গ্রুপের মৌলগুলোকে নাইকোজেনস ( Pnicogens) বলা হয়। গ্রিক ভাষায় Pnicogens শব্দের অর্থ
শ্বাসরোধক। 15-তম গ্রুপের মৌলগুলো কোনটি শ্বাসকার্যে সহায়তা করে না।
15 তম গ্রুপের মৌলগুলোর সাধারণ ধর্ম :
(i) গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক 15তম গ্রুপের মৌলগুলোর মধ্যে একমাত্র N গ্যাসীয়। এ গ্রুপের মৌলের ক্ষেত্রে গ্রুপ বরাবর উপর থেকে
নিচের দিকে মৌলগুলো গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বৃদ্ধি পায়। তবে বিসমাথ (Bi) এর গলনাঙ্ক তুলনামূলকভাবে বেশ কম। (ii) পারমাণবিক ব্যাসার্ধ 15তম গ্রুপের মৌলগুলোর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ অপেক্ষাকৃত ছোট। গ্রুপ 15 এর মৌলগুলো নিউক্লিয়াসে চার্জের পরিমাণ বেশি হওয়ায় যোজ্যতাস্তরের ইলেকট্রনগুলোকে তীব্রভাবে নিউক্লিয়াস আকর্ষণ করে। ফলে পারমাণবিক ব্যাসার্ধের
মানের হ্রাস ঘটে। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় পারমাণবিক ব্যাসার্ধের মানের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু N
থেকে P পরমাণুতে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ যে হারে বৃদ্ধি পায় বাকিদের ক্ষেত্রে ততটা বৃদ্ধি পায় না। কারণ P এর পরবর্তী
মৌলগুলোতে ds 1 উপকক্ষের ইলেকট্রনে দুর্বল আবরণী ক্ষমতার কারণে এ ধরনের ব্যতিক্রমের সৃষ্টি হয়।
(iii) আয়নিকরণ বিভব 15তম গ্রুপের মৌলগুলোর আয়নিকরণ বিভবের মান 14তম গ্রুপের মৌলগুলোর আধুনিকরণ বিভবের মানের তুলনায় অনেক বেশি। 15তম গ্রুপের মৌলগুলোর নিউক্লিয়াসে চার্জের পরমাণ বেশি হওয়ায় যোজ্যতাস্তরে ইলেকট্রনের প্রতি আকর্ষণ বলের প্রভাবও বেশি। এ কারণে আয়নিকরণ বিভবের মানও বেশি হয়। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে নামতে থাকলে আয়নিকরণ বিভবের মানের ক্রমশ হ্রাস ঘটে। কারণ গ্রুপ বরাবর নিচের দিকে নামতে থাকলে পরমাণুর পারমাণবিক ব্যাসার্ধের মানের বৃদ্ধি ঘটে। ফলে যোজ্যতান্তরে ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বল কমে যায়, আয়নিকরণ বিভবের মানও কমে যায়।
(iv) জারণ অবস্থা : 15তম গ্রুপের মৌলসমূহের যোজ্যতাস্তরে ইলেকট্রন বিন্যাস ns np'। অষ্টক পূর্ণতার জন্য আরও অতিরিক্ত তিনটি ইলেকট্রনের প্রয়োজন। এ গ্রুপের মৌলগুলো যখন তিনটি ইলেকট্রনকে গ্রহণ করে M' আসনে পরিণত না তখন অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়। যা ঐ মৌলের প্যাটিস শক্তি থেকে সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়। শুধু NP পরমাণু Nts Ph আয়ন সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। বাকি মৌলগুলোর পক্ষে M আয়নে পরিণত হওয়া সম্ভব নয়। N 2130 kmol 3p আয়নে পরিণত হতো 1450 kJ. mol শক্তির প্রয়োজন হয়। 17/49 উচ্চ আয়নিকরণ বিভবের কারণে 15তম গ্রুপের মৌলগুলোর ক্যাটায়ন গঠন করার প্রবণতা অপেক্ষাকৃত কম। তবুও এরা +33+5 জারণ অবস্থা প্রদর্শন করে থাকে। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে +5 আয়নে পরিণত হওয়ার প্রবণতা অপেক্ষা +3 আয়নে পরিণত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ কারণে গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে নামলে মৌলের যৌগের মধ্যে সমযোজী
বৈশিষ্ট্য কমে যায় এবং আয়নিক বৈশিষ্ট্য বেড়ে যায়।
মনে রাখবেন: নাইট্রোজেন পরমাণুর ক্ষেত্রে +5 থেকে 3 পর্যন্ত সকল জারণ অবস্থাই প্রদর্শন করা সম্ভব। HNO অণুতে +5.
N,O, অণুতে +4, HNO, অণুতে +3, NO অণুতে +2, NO অণুতে I, N. অণুতে O, NH OH অণুতে 1 এবং NH,
অণুতে 3 জারণ অবস্থা প্রদর্শন করে।
16 তম গ্রুপের মৌল
অক্সিজেন (O), সালফার (S), সেলেনিয়াম (Se), টেলুরিয়াম (Te), পোলোনিয়াম (Po) এর মৌলগুলো পর্যায় সারণির 16 তম গ্রুপের মৌল। এ মৌলগুলোর প্রথম চারটি মৌলকে চ্যানকোজেন মৌল বলে।
16 তম গ্রুপের মৌলের সাধারণ ধর্ম :
১. গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক 16তম গ্রুপের মৌলগুলোর ক্ষেত্রে অক্সিজেনের গলনাঙ্ক ( 218°C) ও স্ফুটনাঙ্ক (-183°C) এর মান নিম্ন হলেও এ গ্রুপের পরবর্তী মৌল সালফার এর গলনাঙ্ক ( 112°C) ও স্ফুটনাঙ্ক (446°C) এর মান উচ্চ। এভাবে গ্রুপ বরাবর নিচের দিকে নামতে থাকলে উপর থেকে নিচের দিকে পারমাণবিক আয়তনের বৃদ্ধির সাথে সাথে ভ্যান্ডার ওয়ালস আকর্ষণ বলের মানের বৃদ্ধি ঘটে।
২. পারমাণবিক ব্যাসার্ধ 15 তম গ্রুপের তুলনায় 16 তম গ্রুপের মৌলগুলোর পারমাণবিক ব্যাসার্ধের মান নিম্ন। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পারমাণবিক ব্যাসার্ধের বৃদ্ধি ঘটে।
৩. আয়নিকরণ বিভব 16 তম গ্রুপের মৌলগুলোর আয়নিকরণ বিভবের মান 15 তম গ্রুপের তুলনায় অপেক্ষাকৃত নিম্ন হয়। গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে আধুনিকরণ বিভবের মানের হ্রাস ঘটে। কারণ গ্রুপ বরাবর উপর থেকে নিচের দিকে পারমাণবিক ব্যাসার্ধের বৃদ্ধি এবং ইলেকট্রনের আবরণী ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যোজ্যতাস্তরের ইলেকট্রনের সাথে নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ শক্তির মানের হ্রাস ঘটে।
৪. জারণ অবস্থা : 16 তম গ্রুপের মৌলের যোজ্যতাস্তরের ইলেকট্রনীয় গঠন কাঠামো ns up"। নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রনীয় গঠন প্রাপ্তির জন্য আর দুটি মাত্র ইলেক্ট্রনের প্রয়োজন। এ কারণে এ গ্রুপের মৌলের M- আয়নিক অবস্থা প্রাপ্ত হওয়ার প্রবণতা সর্বাধিক। উপরন্তু পরমাণুগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাস ns np অবস্থার কারণে মৌলের পরমাণুগুলো যোজ্যতাস্তরের দুটি ইলেকট্রনকে ব্যবহার করে দুটি সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রনীয় গঠন কাঠামো প্রাপ্ত হতে পারে। 16তম গ্রুপের মৌলের মধ্যে অক্সিজেন ভিন্ন সকল মৌলই যৌগের মধ্যে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক জারণ অবস্থা প্রদর্শন করে থাকে। ফ্লোরিনের তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান 4 আর অক্সিজেনের তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান 3-5। অক্সিজেন ফ্লোরিন অপেক্ষা কম তড়িৎ ঋণাত্মক হওয়ায় OF যৌগের মধ্যে অক্সিজেন +2 জারন মান প্রদর্শন করে থাকে।
17/49
17 তম গ্রুপের মৌল :
পর্যায় সারণির 17 তম গ্রুপের অধাতব মৌল F. Cl Br I At. এদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য থাকায় এদের একই পরিবারভুক্ত বলা হয়। সমুদ্রের পানিতে ফ্লোরিন, ক্লোরিন, ব্রোমিন ও আয়োডিন লবণ পাওয়া যায়। এ কারণে FCI, Br, s I এ মৌলগুলোকে সাধারণভাবে হ্যালোজেন বলে। গ্রিক ভাষার halos শব্দের অর্থ Sea-salt এবং genes অর্থ to produce অর্থাৎ halogens শব্দের অর্থ Sea-salt producers, যা দিয়ে সমুদ্রের লবণ উৎপন্ন করা হয়। উচ্চ তড়িৎ ঋণাত্নকতার জন্য হ্যালোজেন মৌলগুলো অতিশয় সক্রিয় হয়। এদেরকে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। ফ্লোরিনকে পাওয়া যায় (i) ফ্লোরস্পার (CaF2), (ii) ক্রায়োলাইট (Na, AIF), ক্লোরিনকে পাওয়া যায় (1) সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl), (ii) রক
সল্ট (NaCl), (iii) কার্নাসাইট ( KCI MgCl. 6HO), ব্রোমিনকে কার্নাসাইটের মধ্যে KBr ও MgBr হিসাবে এবং আয়োডিনকে
চিলি সল্ট পিটার (NaNO, Nalo) হিসাবে পাওয়া যায়।
হ্যালোজেনগুলো দ্বিপরমাণুক সমযোজী অণু হিসাবে অবস্থান করে। F2, Cl গ্যাসীয়, Br. তরল এবং I, কঠিন অবস্থায় অবস্থান করে।
d-ব্লক মৌলের বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নরূপঃ
১. d- ব্লক মৌল পর্যায় সারণিতে গ্রুপ 3 থেকে গ্রুপ 12 এর অন্তর্ভুক্ত।
২. d- ব্লক মৌল গুলির বহিঃস্থ দুটি শক্তিস্তরের ইলেকট্রনীয় কাঠামো (n-1)d ns.
৩. d- ব্লক মৌল গুলি সবগুলো ধাতু।
৪. সব অবস্থান্তর মৌল d- ব্লক মৌলের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু সব d-ব্লক মৌল অবস্থান্তর মৌল নয়।
৫. d- ব্লক মৌল সাধারণত উচ্চ গলনাংক ও স্ফুটনাংক বিশিষ্ট হয়।
৬. d- ব্লক মৌল গুলি সাধারণত পরিবর্তনশীল যোজ্যতা প্রদর্শন করে।
প্রশ্ন:আন্তঃঅভ্যন্তরীণ অবস্থান্তর মৌল, বিরল মৃত্তিকা মৌল, ল্যান্থানাইড ও অ্যাকটিনাইড কী?
উত্তর: যে সকল মৌলের s ও p অরবিটাল পরিপূর্ণ থাকে কিন্তু ভেতরের d ও f অরবিটাল ফাঁকা থাকে। থাকে তাদেরকে আন্তঃঅভ্যন্তরীণ অবস্থান্তর মৌল বলা হয়। এদেরকে পর্যায় সারণির নিচে আলাদাভাবে স্থান দেয়া হয়েছে। 4f ইলেকট্রন বিন্যাস বিশিষ্ট মৌলসমূহ ল্যান্থানাইডস নামে পরিচিত এরা মত্তিকায় খুবই কম পাওয়া। পাওয়া যায় বলে এদেরকে বিরল মৃত্তিকা মৌল (Rare Earth Elements) বলা হয়। 5f ইলেকট্রন বিশিষ্ট মৌলসমূহ অ্যাকটিনাইডস নামে পরিচিত। পরিচিত।
ল্যান্থানাইড শ্রেণির মৌলসমূহের সাধারণ ধর্মাবলি নিম্নরূপ:
i.এরা ত্রি-যোজ্যতা এবং জারণ অবস্থা প্রদর্শন করে।
ii. ল্যান্থানাইড লবণগুলো কেলাস পানি বিশিষ্ট হয়ে থাকে।
iii. এরা ল্যান্থানাইড সংকোচন প্রদর্শন করে।
অ্যাকটিনাইড মৌলসমূহের সাধারণ ধর্মাবলি নিম্নরূপ :
i. এরাও ত্রি-যোজ্যতা বিশিষ্ট এবং জারণ সংখ্যা প্রদর্শন করে।
ii. এরা সকলেই তেজস্ক্রিয়তা প্রদর্শন করে।
প্রশ্ন:-িব্লক মৌল কী?
উত্তর: যে সব মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ ইলেকট্রনটি f অরবিটালে প্রবেশ করে সেগুলোকে f-ব্লক মৌল বলা হয়। ল্যান্থানাইড (4f সিরিজ) এবং অ্যাকটিনাইড (5f সিরিজ) মৌলসমূহ ব্লকের অন্তর্ভুক্ত।
এদের বহিঃস্তরে ইলেকট্রন বিন্যাস (n-2) f1-14 (n- 1)d1-10 ns1-2 [n হলো প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা, যা পর্যায় সংখ্যা নির্দেশ করে]।
প্রশ্ন:অন্তঃ অবস্থান্তর মৌল কী?
উত্তর: যে সব মৌলের স্থিতিশীল আয়নের ইলেকট্রন বিন্যাসে f অরবিটাল আংশিক পূর্ণ (f1 হতে f13) হয় তাদেরকে অন্তঃ অবস্থান্তর মৌল (Inner Transition Element) বলা হয়। যেমন- সেরিয়াম Ce (58)
প্রশ্ন: অভ্যন্তরীণ অবস্থান্তর মৌল কী?
উত্তর: যে সব মৌলের স্থিতিশীল আয়নের ইলেকট্রন বিন্যাস (n - 2) fl-13 তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থান্তর মৌল বলে।
প্রশ্ন:-ব্লক মৌলসমূহের সাধারণ ধর্মাবলি লিখ?
উত্তর: পর্যায় সারণীর ৬ষ্ঠ পর্যায়ের ল্যান্থানাম La(57) থেকে পরবর্তী লুটেসিয়াম Lu(71) পর্যন্ত ১৫টি মৌলকে পর্যায় সারণির ৬ষ্ঠ পর্যায়ের ল্যান্থানাম La(57) থেকে পরবর্তী লুটেসিয়াম ল্যান্থানাইড সিরিজ (Lanthanide) বলা হয় । অ্যাক্টিনিয়াম Ac(89) থেকে পরবর্তী লরেনসিয়াম Lr (105) পর্যন্ত ১৫টি মৌলকে অ্যাকটিনাইড সিরিজ (Actinides) বলা হয়।এদের বহিঃস্তরে ইলেকট্রন বিন্যাস (n-2)f1-14 (n-1) d 1-10 ns1 2 [ n হলো প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা,যা পর্যায় সংখ্যা নির্দেশ করে]। এ ৩০টি মৌলকে আধুনিকতম পর্যায় সারা লেখা হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু মৌল অন্তঃ অবস্থান্তর মৌল।
যে সব মৌলের স্থিতিশীল আয়নের ইলেকট্রন বিন্যাসে অরবিটাল আংশিক পূর্ণ (f1 হতে f13) হয় তাদেরকে অন্তঃ অবস্থান্তর মৌল (Inner Transition Element) বলা হয়। যেমন- সেরিয়াম
Ce (58)
f-ব্লক মৌলের সাধারণ বৈশিষ্ট্যসমূহ :
১. সমস্ত f-ব্লক মৌল তড়িৎ ঋণাত্মক ও অত্যন্ত সক্রিয় ধাতু
২. সাধারণভাবে এদের উচ্চ গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক দেখা যায়।
৩. এরা একাধিক জারণ অবস্থা দেখায়। যদিও +3 জারণ অবস্থাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৪. এদের জটিল যৌগ গঠন করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়।
৫.অ্যাক্টিনাইড শ্রেণির বেশির ভাগ মৌল তেজস্ক্রিয় (radioactive) মৌল।
৬.এদের জটিল যৌগ রঙিন (coloured) হয়।
৭. অযুগ্ম ইলেকট্রনের উপস্থিতির জন্য কোনো কোনো -ব্লক মৌল প্যারাচুম্বক (paramagnetic)
প্রকৃতির হয়।
৮. এদের একই ধরনের রাসায়নিক ধর্ম দেখা যায় এবং প্রত্যেকের +3 স্থায়ী জারণ অবস্থা বর্তমান।
৯. এদের উচ্চ ঘনত্ব দেখা যায় ।
১০.f-ব্লক মৌলসমূহের পরমাণুর আকার প্রায় একই বলে এদের পৃথক করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এদের অস্বাভাবিক আয়তন সংকোচন হয় যা ল্যান্থানাইড সংকোচন নামে অভিহিত।
প্রশ্ন: বিরল মৃত্তিকা মৌল কী?
উত্তর: পর্যায় সারণির ৬ষ্ঠ পর্যায়ে ল্যান্থানাইড La(57) এর পরবর্তী মৌল সেরিয়াম, Ce (58) থেকে লুটেসিয়াম, Lu(71) পর্যন্ত 14 টি মৌল ল্যান্থানাইড মৌলকে মধ্যে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। এ 14টি মৌলকে পর্যায় সারণির নিচে একটি সম্পূর্ন আলাদা আনুভূমিক সোরিতে তে সারিতে স্থান দেয়া হয়েছে। এ 14 টি মৌলকে ল্যান্থানাইড বলা হয়। প্রকৃতিতে এর অতি অল্প পরিমাণে পাওয়া যায় বলে বিরল মৃত্তিকা বলে ।
প্রশ্ন: ল্যান্থানাইড সংকোচন কী?
উত্তর: ল্যান্থানাইড La(57) এর পরবর্তী মৌল সেরিয়াম, Ce(58) থেকে লুটেসিয়াম, Lu(71) পর্যন্ত 14 টি মৌল ল্যান্থানাইড মৌল নামে পরিচিত। এ মৌলসমূহের সাধারণ ইলকট্রন বিন্যাস 4f2-14 5s2 5p6 5d0-1 6s2। এ মৌলসমূহের আরে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন আগত ইলকট্রন 6s এরপর 5d উপকক্ষে প্রবেশ না করে 4f উপশক্তিস্তরে প্রবেশ করে। এ-অরবিটালের জ্যামিতিক গঠনের কারণে বিস্তৃত এলাকার ইলেকট্রন মেঘ ছড়িয়ে পড়ে।
এজন্য f-অরবিটালের ইলেকট্রনগুলোর আবরণী প্রভাব খুবই কম হয়। 4f অরবিটালে ইলেকট্রন প্রবেশ করার সাথে সাথে মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা এক একক করে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু 4f অরবিটালের ইলেকট্রনগুলোর আবরণী প্রভাব বিশেষ বৃদ্ধি ঘটে না। ফলে নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক আধানের আকর্ষণ পরবর্তী উপশক্তিস্তরের ইলেকট্রনগুলোকে আকৃষ্ট করে। ফলে মৌলগুলোর পারমাণবিক ও আয়নিক ব্যাসার্ধের ক্রমান্বয়ে হ্রাস ঘটে। যদিও আয়নিক ব্যাসার্ধের হ্রাস পারমাণবিক ব্যাসার্ধের হ্রাস অপেক্ষা অধিক নিয়মিত।
প্রশ্ন: অ্যাকটিনাইড সংকোচন (Actinide Contraction) কী?
উত্তর: অ্যাকটিনিয়াম, AC(89) এর পরবর্তী মৌল থোরিয়াম Th(90) থেকে লরেন্সিয়াম Lr (103) পর্যন্ত 14 টি মৌল ল্যান্থানাইড মৌল নামে পরিচিত। এ মৌলসমূহের সাধারণ ইলকট্রন বিন্যাস 5f2-14 6s2 6p 6d0-17s2। এ মৌলসমূহের আরে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন আগত ইলকট্রন 7s এরপর 6d উপকক্ষে প্রবেশ না করে 5f উপশক্তিস্তরে প্রবেশ করে।এ-অরবিটালের জ্যামিতিক গঠনের কারণে বিস্তৃত এলাকার ইলেকট্রন মেঘ ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য f-অরবিটালের ইলেকট্রনগুলোর আবরণী প্রভাব খুবই কম হয়। 5f অরবিটালে ইলেকট্রন প্রবেশ করার সাথে সাথে মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা এক একক করে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু 5f অরবিটালের ইলেকট্রনগুলোর আবরণী প্রভাব বিশেষ বৃদ্ধি ঘটে না। ফলে নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক আধানের আকর্ষণ পরবর্তী উপশক্তিস্তরের ইলেকট্রনগুলোকে আকৃষ্ট করে। ফলে মৌলগুলোর পারমাণবিক ও আয়নিক ব্যাসার্ধের ক্রমান্বয়ে হ্রাস ঘটে। যদিও আয়নিক ব্যাসার্ধের হ্রাস পারমাণবিক ব্যাসার্ধের হ্রাস অপেক্ষা অধিক নিয়মিত।
পর্যায়বৃত্ত ধর্মঃ যেসব ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম মৌলসমূহের পর্যায় সারণির পর্যায় অনুসারে নির্দিষ্ট ক্রমে আবর্তিত হয় এবং একই গ্রুপে একই ধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়, তাদেরকে পর্যায়বৃত্ত ধর্ম বলে।
পর্যায়বৃত্ত ধর্ম গুলি হচ্ছে-
১. পারমাণবিক ব্যাসার্ধ- কোন গ্রুপের উপর থেকে যত নিচে নামা হয় পারমাণবিক সংখ্যা ততই বাড়তে থাকে। এর ফলে শক্তিস্তরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। একই সাথে পরমাণুর আকারও বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ এই গ্রুপের উপর থেকে নিচে যেতে থাকলে বাইরের দিকে একটি নতুন করে শক্তিস্তর যুক্ত হতে থাকবে এবং এর ফলে পরমাণুর আকারও বাড়তে থাকে। আবার কোনো পর্যায়ে যত বাম দিক থেকে ডান দিকে যাওয়া যায়, পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে শক্তিস্তর সংখ্যা একই থাকে কিন্তু ইলেকট্রন সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আবার কোনো পর্যায়ে যত বাম দিক থেকে ডান দিকে যাওয়া যায়, পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে শক্তিস্তর সংখ্যা একই থাকে কিন্তু ইলেকট্রন সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে নিউক্লিয়াসের অধিক প্রোটন সংখ্যা এবং নিউক্লিয়াসের বাইরের অধিক ইলেকট্রন সংখ্যার মধ্যে আকর্ষণ বেশি হয়। ফলে ইলেকট্রনগুলোর শক্তিস্তর নিউক্লিয়াসের কাছে চলে আসে। ফলে পরমাণুর আকার ছোট হয়ে যায়।
২. আয়নিকরণ শক্তি- গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের এক মোল পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রন অপসারণ করে এক মোল ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন তাকে ঐ মৌলের আয়নিকরণ শক্তি(Ionization energy) বলে।
একই গ্রুপের উপর থেকে নিচে নামলে আকার বাড়ার সাথে সাথে নিউক্লিয়াস থেকে বাইরের স্তর দূরে যেতে থাকে। যার ফলে ইলেকট্রনের ওপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ কমতে থাকে, এ কারণে বাইরের স্তর থেকে ইলেকট্রন অপসারণে কম শক্তির প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ আয়নিকরণ শক্তিও কম। একই পর্যায়ে বাম থেকে ডানে যেতে থাকলে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শক্তিস্তর বাড়ে না। কিন্তু ইলেকট্রন সংখ্যা বাড়তে থাকে। এতে ইলেকট্রনগুলোর ওপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায় যার ফলে ইলেকট্রন অপসারণে বেশি শক্তি লাগে অর্থাৎ আয়নিকরণ শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৩. ইলেকট্রন আসক্তি,-গ্যাসীয় অবস্থায় কোনো মৌলের বিচ্ছিন্ন এক মোল গ্যাসীয় পরমাণুতে এক মোল ইলেকট্রন স্থাপন করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে শক্তি নির্গত হয় তাকে ঐ মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি (Electron Affinity) বলে।
একই গ্রুপের ওপর থেকে নিচে নামলে পরমাণুর ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পায়, আকার বাড়ার সাথে সাথে ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াস থেকে দূরে যেতে থাকে ফলে নিউক্লিয়াস দ্বারা ইলেকট্রনের ওপর আকর্ষণ হ্রাস পেতে থাকে। যার ফলে অসীম থেকে একটি ইলেকট্রন এতে যুক্ত করতে কম শক্তি নির্গত হয় অর্থাৎ ইলেকট্রন আসক্তি কম হয়। একই পর্যায়ে বাম থেকে ডানে যেতে থাকলে আকার কমতে থাকে ফলে নিউক্লিয়াস বহিস্থঃশক্তিস্তরের ইলেকট্রনকে প্রবল ভাবে আকর্ষণ করে। যার ফলে অসীম থেকে একটি ইলেকট্রন বহিস্থঃ শক্তিস্তরে যুক্ত হতে বেশি শক্তি নির্গমন হয়, অর্থাৎ ইলেকট্রন আসক্তি বৃদ্ধি পায়
৪. তড়িৎ ঋণাত্মকতা-সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ অবস্থায় শেয়ারকৃত ইলেকট্রনকে নিজের দিকে টেনে নেয়ার প্রবণতাকে তড়িৎ ঋণাত্মক (Electronegativity) বলে।
কোনো পর্যায়ের যত বাম থেকে ডানে যাওয়া যায় পরমাণুর আকার তত হ্রাস পেতে থাকে। অর্থাৎ ইলেকট্রনগুলোর ওপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায় এবং তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর কোনো গ্রুপে যত উপর থেকে নিচে নামা হয় পরমাণুর আকার তত বাড়তে থাকে অর্থাৎ ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াস থেকে দূরে সরে যায়, তাই ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ কমতে থাকে। ফলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মানও কমতে থাকে ।
৫. গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক,
৬. ধাতব ধর্ম-যে সকল মৌল চকচক করে, আঘাত করলে শব্দ হয় তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে তাদেরকে ধাতু বলে। আবার যে সকল মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাদেরকে ধাতু বলে। ধাতুর ইলেকট্রন ত্যাগের ধর্মকে ধাতব ধর্ম (Metallic Properties) বলে।
যে মৌলের পরমাণু যত সহজ ইলেকট্রন ত্যাগ করতে পারবে, সেই মৌলের ধাতব ধর্ম তত বেশি হবে। পর্যায় সারণিতে যে কোনো পর্যায়ের বাম থেকে ডানে গেলে ধাতব ধর্ম হ্রাস পায় এবং উপর থেকে নিচে গেলে ধাতব ধর্ম বৃদ্ধি পায়।
৭. যোজনী।
৮। অধাতব ধর্ম - যে সকল মৌল চকচক করে না, আঘাত করলে শব্দ হয় না, তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে না, তাদেরকে অধাতু বলে। আবার যে সকল মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয় তাদেরকে অধাতু বলে। অধাতুর ইলেকট্রন গ্রহণের ধর্মকে অধাতব ধর্ম (Non-metallic properties) বলে।
যে মৌলের পরমাণু যত সহজে ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারবে, সেই মৌলের অধাতব ধর্ম তত বেশি হবে। পর্যায় সারণিতে যেকোনো পর্যায়ের বাম থেকে ডানে গেলে অধাতব ধর্ম বৃদ্ধি পায় এবং উপর থেকে নিচে গেলে অধাতব ধর্ম হ্রাস পায়। যে সকল মৌল কোনো কোনো সময় ধাতুর মতো আবার কোনো কোনো সময় অধাতুর মতো আচরণ করে তাদেরকে অর্ধধাতু বা অপধাতু বলে। যেমন- সিলিকন (Si) একটি অপধাতু। পর্যায় সারণির যে কোনো পর্যায়ে বাম দিকের মৌলগুলো সাধারণত ধাতু, মাঝের মৌলগুলো অপধাতু এবং ডান দিকের মৌলগুলো সাধারণত অধাতু।
আয়নিকরণ শক্তির উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব
আয়নিকরণ শক্তির উপর বিভিন্ন নিয়ামকের যেমন- পরমাণুর আকার, উপশক্তিস্তর, ইলেকট্রন বিন্যাস ইত্যাদির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
নিয়ে নিয়ামকসমূহের প্রভাব বর্ণনা করা হলো :
(১) পরমাণুর আকার (Size of Atom) পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনকে অপসারিত করতে প্রয়োজনীয় শক্তিই হলো
আয়নিকরণ শক্তি। পরমাণুর যোজনী ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করে ধরে রাখে ইলেকট্রনের বিপরীত চার্জযুক্ত প্রোটন, যা পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থিত। তাই পরমাণুর নিউক্লিয়াস হতে যোজনী ইলেকট্রনের দূরত্ব যত কম হবে ঐ ইলেকট্রনের উপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ তত বেশি হবে ফলে উহার যোজনী ইলেকট্রন অপসারণে বেশি শক্তির প্রয়োজন হবে অর্থাৎ, আয়নিকরণ শক্তির মান বেশি। হবে। সুতরাং পরমাণুর আকার যত বেশি হবে আয়নিকরণ শক্তির মান ততই কম হবে। পর্যায় সারণির। শ্রেণিতে উপর থেকে যতই নিচে যাওয়া যায় ততই পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বৃদ্ধির সাথে সাথে মৌলসমূহের আয়নিকরণ শক্তির মান হ্রাস ঘটে।
(২) শক্তিস্তর (Energy Level) : নিউক্লিয়াস হতে কত দূরত্বে ইলেকট্রন অবস্থান করছে তা প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যার মান থেকে
জানা যায়। অধিকন্তু ইলেকট্রনের অরবিটাল থেকেও জানা যায় যে, ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের সাথে শক্তিশালী না দুর্বল আকর্ষণ দ্বারা
যুক্ত। যদি n-এর মান বড় হয় তবে নিউক্লিয়াস থেকে ইলেকট্রন অনেক দূরে অবস্থান করে ফলে ইলেকট্রনের উপর নিউক্লিয়াসের
আকর্ষণ হ্রাস পায় এবং ইলেকট্রন সহজেই অপসারিত হয়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে আয়নিকরণ শক্তির মান কম হয়।
ইলেকট্রন আসক্তির উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব
ইলেকট্রন আসক্তির উপর যেসব নিয়ামক প্রভাব বিস্তার করে যেগুলো হলো (1) পরমাণুর আকার (ii) নিউক্লিয়ার চার্জ (iii)
ইলেকট্রন বিন্যাস। নিম্নে নিয়ামকসমূহের প্রভাব বর্ণনা করা হলো : (১) পরমাণুর আকার (Size of Atom) ইলেকট্রনকে কোনো পরমাণুর নিজের দিকে আকর্ষণ করার প্রবণতাকে তার ইলেকট্রন আসক্তি বলে। সাধারণভাবে, পরমাণুর আকার বৃদ্ধিতে ইলেকট্রন আসক্তির মান হ্রাস পায়। পরমাণুর আকার যতই বৃদ্ধি পায় ততই নিউক্লিয়াস হতে পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তর দূরে সরে যায় এবং আগমনকারী ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ হ্রাস পায় ফলে ইলেকট্রন আসক্তির মান কম হয়। যেমন- পর্যায় সারণির গ্রুপ-17 শ্রেণির মৌলসমূহের Fio এর ইলেকট্রন আসক্তির মান 3-6 ev অথচ (13) এর ইলেকট্রন আসক্তির মান 3-2 V
ক্লোরিন পরমাণুর আকারের চেয়ে আয়োডিন পরমাণুর আকার অনেক বড় বলে F এর তুলনায় এর ইলেকট্রন আসক্তির মান কম।
চিন্তা করুন ক্লোরিন পরমাণুর আকার ফ্লোরিন পরমাণু অপেক্ষা বড় হলেও ফ্লোরিন পরমাণুর ইলেকট্রন আসক্তির মান ক্লোরিনের ইলেকট্রন আসক্তির মান অপেক্ষা কম কেন?
(২) পরমাণুর উপস্তর (Subshell of Atom) উপরের আলোচনা হতে এটি পরিষ্কার যে, মৌলসমূহের ইলেকট্রন আসক্তি
পরমাণুর আকারের উপর নির্ভরশীল। পরমাণুর আকারের পাশাপাশি আরও একটি নিয়ামক হলো ইলেকট্রনের উপশক্তি স্তর। ইলেকট্রনের এসব উপত্তর হলো s, p. d এবং f-অরবিটাল। ১- অরবিটালের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি এরপর পর্যায়ক্রমে p. d এবং f- অরবিটালে নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ কমতে থাকে। তাই s অরবিটালে ইলেকট্রন প্রবেশের ক্ষেত্রে ইলেকট্রন আসক্তির মান সবচেয়ে বেশি হবে এবং এরপর p. d এবং f অরবিটালে তুলনামূলকভাবে হ্রাস পাবে। অর্ধপূর্ণ এবং পূর্ণ অরবিটালের স্থিতিশীলতা অপূর্ণ বা আংশিক পূর্ণ অরবিটাল অপেক্ষা অনেক বেশি। যেসব মৌলের যোজনী স্তর
অর্ধপূর্ণ বা পূর্ণ থাকে যেসব মৌলের ইলেকট্রন আসক্তির মান যোজনী স্তর ইলেকট্রন কর্তৃক আংশিক পূর্ণ থাকলে সেসব মৌলের
ইলেকট্রন আসক্তির মান অপেক্ষা কম।
তড়িৎ ঋণাত্মকতার উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব
সমযোজী বন্ধনে অংশগ্রহণকারী পরমাণুষয়ের শেয়ারকৃত ইলেকট্রন একটি পরমাণু কর্তৃক নিজের দিকে টেনে নেওয়ার তুলনামূলক
ক্ষমতাকে ঐ পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে। মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা যেসব নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয় তা হলো- (i) পরমাণুর আকার (ii) উপস্তর এবং (iii) ইলেকট্রন। বিন্যাস। নিম্নে নিয়ামকসমূহের প্রভাব বর্ণনা করা হলো
(i) পরমাণুর আকার (Size of Atom) :
পরমাণুর আকার বৃদ্ধিতে পরমাণুর নিউক্লিয়াস হতে সর্বশেষ শক্তিস্তর দূরে সরে যায় তাই বন্ধনে অংশগ্রহণকারী শেয়ারকৃত ইলেকট্রন জোড়ের উপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ হ্রাস পায় এবং পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতা হ্রাস পায়। গ্রুপ-17 এর মৌলসমূহের তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান নিম্নে দেওয়া হলো :
F = 40, C1=3-0; Br = 2-8 1 = 2.5; At = 2.2
(১) নিউক্লিয়ার চার্জ (Nuclear Charge) : পরমাণুর নিউক্লিয়ার চার্জ বৃদ্ধির সাথে মৌলের ইলেকট্রোনেগেটিভিটি সম্পর্কিত। নিউক্লিয়ার চার্জ যত বেশি হবে ঐ নিউক্লিয়ার কর্তৃক সর্বশেষ স্তরের ইলেকট্রনের প্রতি আকর্ষণ তত বেশি প্রবল হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের মৌলসমূহের Li(3) হতে F(7) পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে নিউক্লিয়াসে একটি করে প্রোটন যুক্ত হয় এবং শেষ শক্তিস্তরে একটি করে ইলেকট্রন যুক্ত হয় অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধিতে নিউক্লিয়ার চার্জ বৃদ্ধি পায় এবং মৌলের তড়িৎ কণাত্মকতার মানও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
আয়নীকরণ শক্তি হলো একটি নিরপেক্ষ পরমাণু থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রন অপসারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি। পরমাণুর আকার এবং আয়নীকরণ শক্তির মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে যা পরমাণুর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পরমাণুর আকার এবং আয়নীকরণ শক্তির সম্পর্ক
পরমাণুর আকার বড় হলে এর বাইরের ইলেকট্রন পরমাণুর কেন্দ্রে থাকা নিউক্লিয়াস থেকে বেশি দূরে থাকে। ফলে, নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক আকর্ষণ শক্তি বাইরের ইলেকট্রনের ওপর তুলনামূলকভাবে কম কাজ করে। এটি আয়নীকরণ শক্তিকে কমিয়ে দেয়।
অন্যদিকে, ছোট আকারের পরমাণুর ক্ষেত্রে বাইরের ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের কাছে অবস্থান করে। ফলে, ইলেকট্রনকে অপসারণ করতে বেশি শক্তি প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ আয়নীকরণ শক্তি বেশি হয়।
পর্যায় সারণিতে ধারা অনুযায়ী পরিবর্তন
১. উপর থেকে নিচে গেলে:
পরমাণুর আকার বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আয়নীকরণ শক্তি কমে যায়। কারণ বাইরের ইলেকট্রন নিউক্লিয়াস থেকে দূরে অবস্থান করে এবং পর্দাপ্রভাব (shielding effect) বাড়ে।
২. বাম থেকে ডান দিকে গেলে:
পরমাণুর আকার ছোট হয় এবং নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ শক্তি বাড়ে। এতে আয়নীকরণ শক্তি বৃদ্ধি পায়।
প্রধান কারণসমূহ
তড়িৎ ঋণাত্মকতা হল একটি পরমাণুর ইলেকট্রন আকর্ষণের ক্ষমতা। পরমাণুর আকার ছোট হলে নিউক্লিয়াসের ইলেকট্রন আকর্ষণের ক্ষমতা বেশি হয়, ফলে তড়িৎ ঋণাত্মকতাও বেশি হয়। বিপরীতে, বড় আকারের পরমাণুতে বাইরের ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াস থেকে দূরে থাকে এবং তড়িৎ ঋণাত্মকতা কম হয়।
পর্যায়ের পরিবর্তন:
উপশক্তিস্তরের উপস্থিতি তড়িৎ ঋণাত্মকতাকে প্রভাবিত করে।
ইলেকট্রন বিন্যাস বা অরবাইটালে ইলেকট্রনের অবস্থান তড়িৎ ঋণাত্মকতায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
২য় পর্যায়ের মৌলের অক্সাইডের ধর্ম
২য় পর্যায়ের মৌলগুলো হাইড্রোজেন থেকে বেরিয়াম পর্যন্ত বিস্তৃত। এদের অক্সাইডের মধ্যে অম্ল, ক্ষারক ও উভধর্মী বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
১. অম্ল ধর্ম
অক্সিজেনের সাথে বেশি ইলেক্ট্রনগ্রহণকারী মৌল যেমন কার্বন (CO₂) ও নাইট্রোজেন (NO₂) এর অক্সাইড অম্লধর্মী।
উদাহরণ:
২. ক্ষারক ধর্ম
ম্যাগনেসিয়াম (MgO) এবং ক্যালসিয়াম (CaO) এর অক্সাইড ক্ষারক ধর্ম প্রদর্শন করে।
উদাহরণ:
৩. উভধর্মী অক্সাইড
কিছু অক্সাইড যেমন অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al₂O₃) উভধর্মী। এরা অম্ল এবং ক্ষার উভয়ের সাথে বিক্রিয়া করে।
উদাহরণ:
৩য় পর্যায়ের মৌলের অক্সাইডের ধর্ম
৩য় পর্যায়ের মৌলগুলো সোডিয়াম থেকে ক্লোরিন পর্যন্ত বিস্তৃত। এদের অক্সাইডের অম্ল, ক্ষারক এবং উভধর্ম বৈশিষ্ট্য আরও স্পষ্ট।
১. অম্ল ধর্ম
নন-মেটাল অক্সাইডগুলো যেমন সালফার ডাই অক্সাইড (SO₂) এবং ফসফরাস পেন্টা অক্সাইড (P₂O₅) অম্লধর্মী।
উদাহরণ:
২. ক্ষারক ধর্ম
সোডিয়াম অক্সাইড (Na₂O) এবং ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড (MgO) ক্ষারক ধর্ম প্রদর্শন করে।
উদাহরণ:
৩. উভধর্মী অক্সাইড
কিছু অক্সাইড যেমন সিলিকন ডাই অক্সাইড (SiO₂) এবং অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al₂O₃) উভধর্মী।
উদাহরণ:
মৌলিক পদার্থসমূহকে পর্যায় সারণিতে সাজানোর সময় তাদের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মগুলোর একটি পর্যায়বৃত্ত ধারা লক্ষ্য করা যায়। এ ধারা মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুনরাবৃত্তি করে। মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্মের ভিত্তিতে রাসায়নিক বন্ধনের প্রকৃতি এবং শক্তি ব্যাখ্যা করা যায়। মৌলের ইলেকট্রন বিন্যাস এবং তড়িৎঋণাত্মকতার পার্থক্যের ভিত্তিতে তাদের রাসায়নিক বন্ধনের ধরন ভিন্ন হয়।
মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম এবং রাসায়নিক বন্ধনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। পর্যায় সারণির প্রতিটি মৌলের বৈশিষ্ট্য থেকে তাদের রাসায়নিক বন্ধনের প্রকৃতি নির্ধারণ করা যায়। এর মাধ্যমে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ধরন এবং আণবিক গঠনের বিশ্লেষণ সহজ হয়।
যোজনী বন্ধন মতবাদ (Valence Bond Theory) অনুসারে, সমযোজী বন্ধন গঠিত হয় যখন দুটি পরমাণুর ভরকেন্দ্রের মধ্যে তাদের বাহ্যিক শেলের ইলেকট্রন অরবিটাল একে অপরকে অধিক্রমণ করে। এই অধিক্রমণের ফলে একটি যুগল ইলেকট্রন ভাগাভাগি হয় যা বন্ধন শক্তি তৈরি করে।
অরবিটাল অধিক্রমণের ফলে যে বন্ধন গঠিত হয় তা শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল হয়। অরবিটাল অধিক্রমণের ধরন বিভিন্ন হতে পারে, যেমনঃ
Sigma (σ) বন্ধন:
১. বন্ধনের শক্তি:
অরবিটাল অধিক্রমণের গভীরতা বন্ধনের শক্তি নির্ধারণ করে। অধিক অধিক্রমণের ফলে বন্ধন শক্তিশালী হয়।
২. অণুর গঠন:
অরবিটাল অধিক্রমণ অণুর জ্যামিতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ:
অরবিটাল অধিক্রমণের প্রকৃতি অণুর রাসায়নিক ও ভৌত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে।
1916 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী জি. এন. লুইস ( G. N. Lewis ) সর্বপ্রথম সমযোজী বন্ধন সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনি প্রস্তাব করেন, মৌলের মধ্যে তড়িৎ ঋণাত্মকতা মানের পার্থক্য খুব কম বা সমান বা প্রায় সমান হলে ইলেকট্রন দান ও গ্রহণের মাধ্যমে আয়নিক বন্ধন গঠিত হয় না। তাঁর ধারণা মতে, সমান বা প্রায় সমান তড়িৎ ঋণাত্মকতা সম্পন্ন একই মৌলের দুটি পরমাণু তাদের নিজ নিজ সর্ব বহিস্থ শক্তিস্তরের সমান সংখ্যক বিজোড় ইলেকট্রন দ্বারা এক বা একাধিক ইলেকট্রন জোড়ের সৃষ্টি করে। উভয় পরমাণু দ্বারা সমভাবে ব্যবহৃত এ ইলেকট্রন জোড় বা জোড়গুলোর মাধ্যমে রাসায়নিক বন্ধন গঠিত হয়। এভাবে গঠিত রাসায়নিক বন্ধনকে সমযোজী বন্ধন বলা হয়।
দুটি একই বা ভিন্ন মৌলের পরমাণু দুটি থেকে একটি করে মোট দুটি বিজোড় বা অযুগ্ম ও বিপরীত ঘূর্ণন-বিশিষ্ট ইলেকট্রন দ্বারা একটি সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়। দুটি বিপরীত ঘূর্ণন বিশিষ্ট ইলেকট্রন দুটির মধ্যে সৃষ্ট তড়িৎ চুম্বকীয় আকর্ষণ বলই সমযোজী বন্ধন গঠনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখে। উদাহরণ A ও B মৌলের পরমাণু পরস্পরের মধ্যে দুটি ইলেকট্রন শেয়ার করে কীভাবে একটি A- B সমযোজী বন্ধন গঠন করে তা চিত্রের সাহায্যে দেখানো হলো। A.+x B, AXB, A- B (ও X চিহ্ন-ইলেকট্রনের প্রতীক হিসাবে ধরা হয়েছে।) A মৌলের পরমাণু নিউক্লিয়াস B
মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করে। বিপরীতভাবে B মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াস A মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রনকে
সমানভাবে আকর্ষণ করে। উভয় নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বলের প্রভাবে ইলেকট্রন দুটির একসাথে ঘূর্ণনের ফলে নিউক্লিয়াস দুটির মধ্যে
মৌলের ইলেকট্রন ঘনত্বের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটে। ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রনের ঘনত্বের এ ধরনের বৃদ্ধি ঘটিয়ে পরমাণু দুটির
মধ্যে সমযোজী বন্ধনের সৃষ্টি হয় এবং ইলেকট্রন জোড়টি A ও B পরমাণু দুটির নিউক্লিয়াসের মাঝামাঝি সুবিধাজনকভাবে অবস্থান।
করে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী একই মৌলের পরমাণু বা ভিন্ন মৌলের পরমাণু দুটির নিজ নিষ্ট রামতা স্তর থেকে সমানসংখ্যক বিজোড় ইলেকট্রন দ্বারা এক বা একাধিক ইলেকট্রন জোড় গঠিত হয়। এ ধরনের ইলেকট্রন জোড় পরমাণুষরের নিউক্লিয়াস দ্বারা সমানভাবে ব্যবহৃত হয়ে পরমাণু দুটি যে রাসায়নিক বন্ধন সৃষ্টি করে তাকে সমযোজী বন্ধন বলে। যেমন- H2 N2 O2, Cl2, NH, HO CH, প্রভৃতি সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত অণু ।
সমযোজী বন্ধনের প্রকারভেদ (Types of Covalent [Bond) সমযোজী বন্ধনের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সমযোজী বন্ধন তিন প্রকারের হয়। যথা: (i) সমযোজী একক বন্ধন, (ii) সমযোজী দ্বি-
বন্ধন, (iii) সমযোজী ত্ৰি-বন্ধন।
(i) সমযোজী একক বন্ধন: সমযোজী বন্ধনে অংশগ্রহণকারী দুটি পরমাণুর প্রত্যেকটি থেকে একটি করে ইলেকট্রন বন্ধনে অংশগ্রহণ করে একটি ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি করে। এ ইলেকট্রন জোড় সমযোজী একক বন্ধন গঠন করে এবং একে চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন--H, অণু (H – H), F, অণু (FF), Cl অণু (CI – CI), Bry অণু (Br – Br) ইত্যাদি। H; অণুর গঠন : H-পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা । H-পরমাণুতে একটি মাত্র ইলেকট্রন বর্তমান। এর ইলেকট্রন বিন্যাস,
H(1) = 1s
দুটি H পরমাণু তাদের 1s পারমাণবিক অরবিটালের অযুগা ইলেকট্রনকে পরস্পর পরস্পরের সাথে বিপরীত স্পিনে শেয়ার করে। এ দুটি অযুগ্ম ও বিপরীত ঘূর্ণন বিশিষ্ট ইলেকট্রন দ্বারা সমযোজী একক বন্ধন গঠিত হয়।
বা, HH
H.+xH - HH দুটি বিপরীত ঘূর্ণন বিশিষ্ট ইলেকট্রন দুটির মধ্যকার সৃষ্ট তড়িৎ চুম্বকীয় আকর্ষণ বলই সমযোজী একক বন্ধন গঠনে সহায়তা করে। (ii) সমযোজী দ্বিবন্ধন : যখন বন্ধনে অংশগ্রহণকারী দুটি পরমাণুর প্রত্যেকটি থেকে দুটি করে ইলেকট্রন এনে দুটি ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি করে, তখন পরমাণু দুটির মধ্যে সমযোজী দ্বিবন্ধন গঠিত হয়। একে " = " চিহ্ন ছাড়া প্রকাশ করা হয়।
যেমন- O2 অণু (O = 0 ),
CH=CH, অণু, CO2 অণু (O = C = O) ইত্যাদি।
O2 অণুর গঠন : (O-পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা ৪ এবং এর ইলেকট্রন বিন্যাস O(8) = 1s 2s 2p2p/2017 11 O-পরমাণুর যোজ্যতাস্তর ২য় শক্তিস্তরে দুটি জোড় ও দুটি বিজোড় ইলেকট্রন বর্তমান। একটি O পরমাণুর যোজ্যতা স্তরে দুটি বিজোড় ইলেকট্রন অপর O পরমাণুর যোজ্যতাস্তরের দুটি বিজোড় ইলেকট্রনের সাথে বিপরীত স্পিনে শেয়ার করে O2 অণুর আণবিক গঠনের সৃষ্টি করে।
বা, O2 এভাবে দুটি O পরমাণুর চারটি বিজোড় ইলেকট্রনের বিপরীত স্পিনের শেয়ারের মাধ্যমে সমযোজী দ্বিবন্ধন গঠিত হয়। (iii) সমযোজী ত্রিবন্ধন : যখন সমযোজী বন্ধনে অংশগ্রহণকারী দুটি পরমাণুর প্রত্যেকটি থেকে তিনটি করে ইলেকট্রন এসে তিনটি ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি করে, তখন পরমাণু দুটির মধ্যে সমযোজী ত্রিবন্ধন গঠিত হয়। একে " =" চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন- N2 অণু (N=N), CH=CH অণু (CC), CN আয়ন (CN) ইত্যাদি।
28
2p
N2 অণুর গঠন : N-পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা 7 এবং এর ইলেকট্রন বিন্যাস N(7) = 1s2 2s22p' in N
N-পরমাণুর যোজ্যতাস্তর ২য় শক্তিস্তরে একটি জোড় ও তিনটি বিজোড় ইলেকট্রন বর্তমান। একটি N-পরমাণুর যোজ্যতাস্তরের তিনটি বিজোড় ইলেকট্রন অপর N-পরমাণুর যোজ্যতাস্তরের তিনটি বিজোড় ইলেকট্রনের সাথে বিপরীত স্পিনে শেয়ার করে N2 অণুর আণবিক গঠনের সৃষ্টি করে ।
→ N-IN
বা, N N
বা, Na
এভাবে দুটি N-পরমাণুর ছয়টি বিজোড় ইলেকট্রনের বিপরীত স্পিনের শেয়ারের মাধ্যমে সমযোজী ত্রিবন্ধন গঠিত হয়।
পারমাণবিক অরবিটালের অধিক্রমণ ও অরবিটালের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে সমযোজী বন্ধনকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
অরবিটালের সংকরণ (Orbital Hybridization)
সমযোজী বন্ধন গঠনের ক্ষেত্রে পরমাণুর যোজনী স্তরে অযুগ্ম ইলেকট্রন থাকা প্রয়োজন। কোনো পরমাণুর যোজনী স্তরে যে কয়টি অযুগা ইলেকট্রন থাকে সেই সংখ্যাই ঐ মৌলের যোজনী হয়। হাইড্রোজেন, ক্লোরিন এবং অক্সিজেন পরমাণুর অযুগ্ম ইলেকট্রনের সংখ্যা যথাক্রমে H=1টি, CI=1টি, O= 2টি। সুতরাং হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিন একযোজী পরমাণু এবং অক্সিজেন দ্বিযোজী পরমাণু। কিন্তু Be B এবং C ইত্যাদি পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসের সাথে তাদের প্রকৃত যোজনীর হিসাব পাওয়া যায় না।
Be(4) B(5)
C(6)
1s 2s 2p¹
আবার B(5) এর যোজনী স্তরে একটি ও C(6) এর যোজনী স্তরে ২টি অযুগ্ম ইলেকট্রন রয়েছে। তাই Bis) এর যোজনী 1 (এক)
ইলেকট্রন বিন্যাস হতে দেখা যায় Be(4) এর যোজনী স্তরে কোনো অযুগ্ম ইলেকট্রন নেই অর্থাৎ Be(4) এর যোজনী () (শূন্য), বিক্রিয়াকালে পরমাণুর সমশক্তি বা প্রায় সমশক্তি সম্পন্ন অরবিটালের মধ্যে নিম্নশক্তির অরবিটালের ইলেকট্রন উচ্চস্তরে উন্নীত হয়ে
এবং C(6) এর যোজনী 2 (দুই) হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে Be B এবং C যথাক্রমে BeCl, BCI, CCL, স্থায়ী যৌগ গঠন করে। এসব যৌগে Be B এবং C এর যোজনী যথাক্রমে 2, 3 এবং 4। মৌলের পরমাণুর এ ধরনের যোজনী ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানীরা বলেন:
অযুগা ইলেকট্রনের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এ প্রক্রিয়াকে অরবিটালের সংকরীকরণ বলে। Be ( 4 ) 1s 2s2
Be (4)
1s 2s 2p¹
B(5) 1s 2s 2p
C(6) -
1s2 2s 2p2p', 1522p2p
সুতরাং উত্তেজিত (*) অবস্থায় Be B এবং C এর পরমাণুতে অযুগ্ম ইলেকট্রন সংখ্যা যথাক্রমে 2, 3 এবং এটি থাকে বলে এদের যোজনী 2, 3 ও 4 হয়।
C - 1s 2s 2p 2p, 2 p
জেনে রাখা ভালো
• সমশক্তিসম্পন্ন বা প্রায় সমশক্তি সম্পন্ন অরবিটালের মধ্যে সংকরণ ঘটে। • শুধু বিচ্ছিন্ন একক পরমাণুর অরবিটালের মধ্যে সংকরণ ঘটে।
14/46
• যতটি অরবিটাল সংকরণে অংশগ্রহণ করে ততটি একই শক্তি সম্পন্ন সংকর অরবিটালের সৃষ্টি হয়।
• সংকর অরবিটালের প্রকৃতির উপর অণুর আকৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
এই সংকরীকরণে একটি s -অরবিটাল ও একটি p -অরবিটাল অংশগ্রহণ করে। এর ফলে দুটি সংকর অরবিটাল গঠিত হয়, যেগুলোর মধ্যে 180 deg কোণ থাকে। এই ধরনের অরবিটাল সরলরৈখিক (linear) আকার ধারণ করে। উদাহরণ: ইথাইন (C₂H₂)।
এখানে একটি s -অরবিটাল ও দুটি p -অরবিটাল অংশগ্রহণ করে। এর ফলে তিনটি সংকর অরবিটাল গঠিত হয়, যেগুলো 120° কোণে থাকে এবং ত্রিভুজাকার সমতল (trigonal planar) আকার ধারণ করে। উদাহরণ: ইথিন (C2H4)।
একটি s -অরবিটাল ও তিনটি p -অরবিটাল অংশগ্রহণ করে। এর ফলে চারটি সংকর অরবিটাল গঠিত হয়, যেগুলো 109.5° কোণে থাকে এবং চতুর্মুখী (tetrahedral) আকার ধারণ করে। উদাহরণ: মিথেন
এখানে একটি s -অরবিটাল, তিনটি p -অরবিটাল ও একটি d -অরবিটাল অংশগ্রহণ করে। এর ফলে পাঁচটি সংকর অরবিটাল গঠিত হয়, যা ত্রিকোণীয় দ্বিবিপিরামিডাল (trigonal bipyramidal) আকার ধারণ করে। উদাহরণ: ফসফরাস পেন্টাক্লোরাইড
এই সংকরীকরণে একটি s -অরবিটাল, তিনটি p -অরবিটাল এবং দুটি d -অরবিটাল অংশগ্রহণ করে। এর ফলে ছয়টি সংকর অরবিটাল গঠিত হয়, যা অষ্টাফলকাকার (octahedral) আকার ধারণ করে। উদাহরণ: সালফার হেক্সাফ্লোরাইড
সংকর অবস্থার ধারণা
কেন্দ্রীয় পরমাণুর সংকর অবস্থা নির্ধারণ করতে ইলেকট্রন বিন্যাস এবং বন্ডের জ্যামিতি বিশ্লেষণ করতে হয়।
সংকর অবস্থার নির্ণয়ের ধাপ
১. কেন্দ্রীয় পরমাণু নির্ধারণ
যৌগে যে পরমাণু সবচেয়ে বেশি বন্ড তৈরি করে এবং সাধারণত কম ইলেকট্রনেগেটিভ, সেটি কেন্দ্রীয় পরমাণু হয়।
উদাহরণ: NH₃-এ নাইট্রোজেন কেন্দ্রীয় পরমাণু।
২. ভ্যালেন্স শেলের ইলেকট্রন সংখ্যা নির্ধারণ
কেন্দ্রীয় পরমাণুর ভ্যালেন্স শেলে থাকা ইলেকট্রনের সংখ্যা নির্ধারণ করুন।
উদাহরণ: নাইট্রোজেনের ভ্যালেন্স শেলে ৫টি ইলেকট্রন।
৩. বন্ড গঠনের জন্য ব্যবহারকৃত ইলেকট্রন যোগ করুন
যৌগে কেন্দ্রীয় পরমাণুর সাথে যুক্ত অন্যান্য পরমাণুর মাধ্যমে বন্ড তৈরিতে ব্যবহৃত ইলেকট্রন সংখ্যা যোগ করুন।
উদাহরণ: NH₃-এ ৩টি হাইড্রোজেন প্রতিটির সাথে ১টি ইলেকট্রন ব্যবহার করে।
৪. মোট ইলেকট্রন সংখ্যা ভাগ করে নিন
মোট ইলেকট্রন সংখ্যা দুই দিয়ে ভাগ করুন। ফলাফল বন্ডের সংখ্যা নির্দেশ করে।
উদাহরণ: NH₃-এ মোট ৮টি ইলেকট্রন → ৮/২ = ৪।
৫. সংকর অবস্থা নির্ধারণ
বন্ডের সংখ্যা অনুযায়ী সংকর অবস্থা নির্ধারণ করুন।
বন্ড সংখ্যা | সংকর অবস্থা | জ্যামিতি |
---|---|---|
২ | sp | রৈখিক (Linear) |
৩ | sp² | ত্রিভুজাকার (Trigonal planar) |
৪ | sp³ | চতুর্মুখী (Tetrahedral) |
৫ | sp³d | ত্রিকোণ দ্বিপিরামিড (Trigonal bipyramidal) |
৬ | sp³d² | অক্টাহেড্রাল (Octahedral) |
উদাহরণ
১. NH₃
২. BF₃
অণুর আকৃতি এবং বন্ধন কোণ প্রধানত ভ্যালেন্স শেল ইলেকট্রন পেয়ার রিপালশন (VSEPR) তত্ত্বের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি পরমাণুর চারপাশে থাকা ইলেকট্রন জোড়াগুলো একে অপরকে যত দূরে সম্ভব ঠেলে রাখে।
মুক্তজোড় ইলেকট্রনগুলোর উপস্থিতি এবং তাদের রিপালশন অণুর আকৃতি এবং বন্ধন কোণে পরিবর্তন আনে। এগুলোর প্রভাব নিম্নরূপ:
মুক্তজোড় ইলেকট্রন অণুর আকৃতি এবং বন্ধন কোণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাদের উপস্থিতি বন্ধন কোণ সংকুচিত করে এবং আকৃতিকে বিকৃত করতে পারে। এটি রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এবং বিক্রিয়ার ধরন নির্ধারণে সহায়তা করে।
সমযোজী যৌগ অণুর মডেল তৈরি করার জন্য বিভিন্ন ধরণের তত্ত্ব এবং ধারণা ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে প্রধান উপাদানগুলো হলোঃ
লুইস বিন্দু গঠন অণুর বৈশিষ্ট্য এবং বন্ধনের প্রকৃতি বোঝার জন্য ব্যবহার করা হয়। এখানে প্রতিটি পরমাণুর চারপাশে তাদের বৈলেন্স শেলের ইলেকট্রন বিন্দুর মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়।
অণুর ত্রিমাত্রিক গঠন বোঝার জন্য অরবিটাল হাইব্রিডাইজেশনের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ। এতে বিভিন্ন ধরণের অরবিটাল মিশ্রণ হয়, যেমনঃ
ভিএসইপিআর তত্ত্ব অণুর ইলেকট্রন যুগলের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে অণুর জ্যামিতি নির্ধারণ করে।
মলিকুলার অরবিটাল তত্ত্ব সমযোজী যৌগের ইলেকট্রনের গতি এবং বন্ধনের শক্তি ব্যাখ্যা করে। এখানে অণুর ইলেকট্রনগুলো মলিকুলার অরবিটাল তৈরি করে যা সম্পূর্ণ অণুতে ছড়িয়ে থাকে।
সন্নিবেশ বন্ধন কী?সন্নিবেশ সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য লিখ৷
দুটি পরমাণুর মধ্যে সমযোজী বন্ধন সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রন যুগল একটিমাত্র পরমাণু কর্তৃক যোগান দিয়ে এবং অপর পরমাণু তা সমভাবে শেয়ারের মাধ্যমে যে বন্ধনের সৃষ্টি হয় তাকে সন্নিবেশ বন্ধন বলে।
যেমন: NH3—H+ = NH4+ ৷এক্ষেত্রে NH3 অনু হাইড্রোজেন অায়নকে একজোড়া electron donate করে এবং উভয়ে তা সমভাবে share করে NH4+ ion গঠন করে৷
সন্নিবেশ সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
মুক্তজোড় ইলেকট্রন এর মাধ্যমে সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়।
সন্নিবেশ বন্ধনের দ্বারা জটিল যৌগ গঠিত হয়।
কমপক্ষে এক জোড়া মুক্তজোড় ইলেকট্রন দানে সক্ষম কোন পরমাণুর সাথে, ঔ মুক্তজোড় ইলেকট্রন গ্রহণে সক্ষম কোন পরমাণুর মধ্যে সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়।
সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধন একমুখী তীর চিহ্ন দ্বারা দেখানো হয়।
সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধন গঠনে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রন দুটি কেবল একটি পরমাণু যোগান দেয় এবং অপর পরমাণু কেবল ঔ দুটি ইলেকট্রন শেয়ার করে।
এদের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বন্ধন গঠনের উপর নির্ভর করে।
একই যৌগে একাধিক ধরণের রাসায়নিক বন্ধন উপস্থিত হতে পারে, যা যৌগের বৈশিষ্ট্য এবং আচরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই ধরণের যৌগে আয়নিক, সমযোজী, ধাতব, এবং হাইড্রোজেন বন্ধন একসঙ্গে থাকতে পারে।
অনেক জটিল যৌগে আয়নিক এবং সমযোজী বন্ধন উভয়ই থাকে।
জলীয় পরিবেশে অনেক যৌগে সমযোজী এবং হাইড্রোজেন বন্ধন একসঙ্গে থাকে।
কিছু যৌগে ধাতব এবং সমযোজী বন্ধন উভয়ই উপস্থিত থাকে।
কিছু যৌগে আয়নিক এবং হাইড্রোজেন বন্ধন একসঙ্গে দেখা যায়।
সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধন এবং সমযোজী বন্ধন উভয়ই ইলেকট্রন ভাগাভাগির মাধ্যমে গঠিত হলেও এদের গঠনের পদ্ধতি এবং বৈশিষ্ট্যগুলোতে পার্থক্য রয়েছে।
বৈশিষ্ট্য | সন্নিবেশ সমযোজী বন্ধন | সমযোজী বন্ধন |
---|---|---|
ইলেকট্রন উৎস | একটি পরমাণু সরবরাহ করে | উভয় পরমাণু সরবরাহ করে |
গঠন প্রক্রিয়া | একক ইলেকট্রন জোড়া ভাগাভাগি | উভয় পরমাণুর ইলেকট্রন শেয়ারিং |
প্রতীক | তীর চিহ্ন (→) | ড্যাশ (-) |
উদাহরণ | NH₃→BF₃ | H₂, Cl₂, H₂O |
প্রকৃতি | বিশেষ সমযোজী বন্ধন | সাধারণ সমযোজী বন্ধন |
সমযোজী বন্ধনের পোলারিটি
সমযোজী বন্ধন তখন পোলার (polar) হয়, যখন বন্ধনে অংশগ্রহণকারী দুটি পরমাণুর তড়িৎ ঋণাত্মকতার পার্থক্য থাকে। এক্ষেত্রে ইলেকট্রনজোড়া তড়িৎঋণাত্মক পরমাণুর দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়, ফলে বন্ধনের এক প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক (+δ) এবং অন্য প্রান্তে আংশিক ঋণাত্মক (-δ) আকার ধারণ করে।
তড়িৎ ঋণাত্মকতার প্রভাব
১. তড়িৎঋণাত্মকতার পার্থক্যের গুরুত্ব:
২. ইলেকট্রন বিভাজন:
বন্ধনের প্রকারভেদ
১. পোলার বন্ধন:
যেখানে তড়িৎঋণাত্মকতার পার্থক্য থাকে। উদাহরণ: HF, HCl।
২. অপোলার বন্ধন:
যেখানে তড়িৎঋণাত্মকতার পার্থক্য নেই বা খুব কম। উদাহরণ: O₂, N₂।
পোলারিটির গুরুত্ব
১. আণবিক গঠন ও প্রকৃতি নির্ধারণ:
পোলারিটি নির্ধারণ করে অণুর দ্রবণীয়তা এবং ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য।
২. আন্তঃআণবিক আকর্ষণ:
পোলার অণুর মধ্যে ডিপোল-ডিপোল আকর্ষণ সৃষ্টি হয়, যা তাদের সঞ্চালনশীলতা এবং গলনাঙ্ক প্রভাবিত করে।
পোলারায়ন বলতে একটি আয়নের আকার পরিবর্তন বা বিকৃতিকে বোঝায়, যা একটি কেশিয়ন বা অ্যানিয়নের শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের কারণে ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় অ্যানিয়ন বিকৃত হয়ে কেশিয়নের দিকে আকৃষ্ট হয়। এর ফলে আয়নের আকার এবং বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন ঘটে।
পোলারায়নের ফলে গঠিত যৌগের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আসে। যেমন:
আয়নিক যৌগের সংজ্ঞা
আয়নিক যৌগ গঠিত হয় ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নের ইলেক্ট্রস্ট্যাটিক আকর্ষণের মাধ্যমে। তবে অনেক আয়নিক যৌগে কিছু সমযোজী বৈশিষ্ট্যও বিদ্যমান থাকে।
সমযোজী বৈশিষ্ট্য নির্ভরশীলতা
১. ক্যাশিনস্কি-ফজান বিধি
ফজান বিধি অনুসারে আয়নিক যৌগে সমযোজী বৈশিষ্ট্য উপস্থিত থাকে যদি নিচের শর্তগুলো পূরণ হয়:
সমযোজী বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি
১. বন্ডের প্রকৃতি
২. গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক
৩. দ্রাব্যতা
উদাহরণ
১. AlCl₃
২. BeCl₂
উপসংহার
(ব্যতীত রাখা হয়েছে আপনার নির্দেশ অনুসারে।)
আয়ণিক বিভব হলো একটি নিরপেক্ষ পরমাণু থেকে একটি ইলেকট্রন অপসারণ করতে প্রয়োজনীয় শক্তি। এটি একটি মৌলের রাসায়নিক ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক। আয়ণিক বিভব সাধারণত ইলেকট্রন ভোল্ট (eV) বা কিলোজুল পার মোল (kJ/mol) এককে প্রকাশ করা হয়।
পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের শেল থেকে প্রথম ইলেকট্রন সরানোর জন্য যে শক্তি প্রয়োজন, তাকে প্রথম আয়ণিক বিভব বলা হয়।
প্রথম ইলেকট্রন সরানোর পর উৎপন্ন ক্যাটায়ন থেকে আরও একটি ইলেকট্রন অপসারণ করতে যে শক্তি প্রয়োজন, তা দ্বিতীয় আয়ণিক বিভব। এটি সাধারণত প্রথম আয়ণিক বিভবের তুলনায় বেশি।
আয়ণিক বিভব একটি মৌলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যা এর রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার প্রকৃতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। এটি পরমাণুর আকার, ইলেকট্রন বিন্যাস এবং পর্যায় সারণির অবস্থান অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
মৌলের কর্ণ বা পারমাণবিক রেডিয়াস হল একটি মৌলের পরমাণুর কেন্দ্র থেকে এর সবচেয়ে বাইরের ইলেকট্রন শেলের দূরত্ব। এটি বিভিন্ন উপাদানের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এবং পর্যায় সারণিতে তাদের অবস্থানের সাথে সম্পর্কিত।
আয়নিক অবস্থা:
ধনায়ন (Cation ) গঠিত হলে কর্ণ ছোট হয় কারণ ইলেকট্রনের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে নিউক্লিয়ার আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়।
ঋণায়ন ( Anion ) গঠিত হলে কর্ণ বড় হয় কারণ অতিরিক্ত ইলেকট্রনের কারণে ইলেকট্রন-ইলেকট্রন বিকর্ষণ বৃদ্ধি পায়।
ভ্যানডার ওয়ালস বল হল আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল যা নিরপেক্ষ আণবিক কণার মধ্যে কার্যকর হয়। এটি তুলনামূলক দুর্বল বল হলেও বিভিন্ন পদার্থের গঠন এবং বৈশিষ্ট্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হাইড্রোজেন বন্ধন একটি বিশেষ ধরনের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি, যা হাইড্রোজেন পরমাণু এবং একটি উচ্চ তড়িৎঋণাত্মক মৌলের মধ্যে গঠিত হয়। এটি রাসায়নিক বন্ধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধরন যা অনেক পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যে প্রভাব ফেলে।
হাইড্রোজেন বন্ধন কেবল পড়াশোনার একটি টপিক বললে খুবই ভুল হবে।
হাইড্রোজেন বন্ধনে গুরুত্ব কত সেটা আমাদের জন্য কল্পনাতীত।
আমরা যে পানি পান করি সেটায় H-Bond বিদ্যমান।এই H-Bond এর জন্যই পানি তরল হয়। তাই আমরা পান করতে পারি।
আমাদের বৈশিষ্ট্য রক্ষাকারী ও জীবন নিয়ন্ত্রক DNA এর বেজ সিকুয়েন্সেও রয়েছে H-Bond.
জ্বালানি হিসেবে যে ইথানল ব্যবহার করি,সেটাতেও রয়েছে H-Bond.
হাইড্রোজেন বন্ড: হাইড্রোজেন মৌলের আণবিক সংখ্যা এক। এর কেন্দ্রের নিউক্লিয়াসে একটি প্রোটন আছে, আর সেই প্রোটনের চারপাশে নির্দিষ্ট গোলাকার কক্ষপথে একটি ইলেকট্রন ঘুরতে থাকে। হাইড্রোজেনের সাথে অন্য মৌলের বন্ধন তৈরির সময় আরেকটি বিষয় জানা জরুরি, তা হলো তড়িৎ ঋণাত্মকতা। কোনো অণুতে অবস্থিত পরমাণুর নিজের দিকে আকর্ষণ করার প্রবণতাই তড়িৎ ঋণাত্মকতা। যখন কোনো হাইড্রোজেন পরমাণু নিজের চেয়ে অধিক তড়িৎ ঋণাত্মকতা সম্পন্ন মৌলের (যেমন – নাইট্রোজেন, ফ্লোরিন, অক্সিজেন ইত্যাদি) পরমাণুর সাথে বন্ধন তৈরি করে, তখন তারা একে অপরের একটি করে ইলেকট্রন শেয়ার করে। এমন বন্ধনকে সমযোজী বন্ধন বলা হয়, আর এই শেয়ারকৃত ইলেকট্রনকে বলে ইলেকট্রন জোড়। সমযোজী বন্ধনের শেয়ারকৃত ইলেকট্রন জোড় অধিক তড়িৎ ঋণাত্মকতাসম্পন্ন মৌলের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে। পানির ক্ষেত্রে জোড়টি অক্সিজেনের কাছে সরে এসে আংশিক ঋণাত্মক চার্জ সৃষ্টি করে। আর হাইড্রোজেন থেকে দূরে সরে তার ওপর আংশিক ধনাত্মক চার্জ সৃষ্টি করে। নিচের ছবিটিতে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের সমযোজী বন্ধনের আংশিক চার্জগুলো দেখানো হয়েছে।
ছবি: অধিক তড়িৎ ঋণাত্মকতাসম্পন্ন মৌলের দিকে শেয়ারকৃত ইলেকট্রন জোড় বেশি ঝুঁকে আছে
একই ভাবে অক্সিজেন পরমাণুর অপরদিকেও আরেকটি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয়, এবং সেখানেও শেয়ারকৃত ইলেকট্রন জোড়টি অক্সিজেনের দিকে সরে আসে। তাহলে দুইটি আংশিক ঋণাত্মক চার্জ অক্সিজেনের দিকে, আর দুইটি আংশিক ধনাত্মক চার্জ দুই হাইড্রোজেন পরমাণুর দিকে সৃষ্টি হয়। এভাবে পানির অণুটির মধ্যে দুইটি মেরুর সৃষ্টি হয়। কোনো জায়গায় অনেকগুলো অণু একসাথে থাকলে অণুগুলোর মধ্যে সৃষ্ট হওয়া বিপরীত মেরুগুলো কাছাকাছি আসে। তখন একটি অণুর হাইড্রোজেন প্রান্ত (আংশিক ধনাত্মক) অন্য অণুর আংশিক ঋণাত্মক প্রান্তের দিকে দুর্বল আকর্ষণ অনুভব করে। এভাবে পানির অণুগুলো পরস্পরের সাথে দুর্বল আকর্ষণ বলের মাধ্যমে যুক্ত থাকে।
ছবি: পানির অণুগুলোর হাইড্রোজেন বন্ড
উপরের ছবির মতো পানির অণুগুলোর বিপরীত প্রান্তগুলো একে অপরের দিকে আকর্ষিত হয় এবং অনেকগুলো পানির অণু একত্রিত হয়ে বিরাট আণবিক গুচ্ছ তৈরি করে। ফলে পানির অণুগুলোকে আলাদা করতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। এ কারণেই পানি কক্ষ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে আর এর হাইড্রোজেন বন্ড ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভেঙে যায়। যদি পানির অণুতে হাইড্রোজেন বন্ড না থাকতো তাহলে পানি গ্যাসীয় অবস্থায় বিরাজ করত। তরল পানির অভাবে জীবন সৃষ্টি হতো না কিংবা জীবনধারণ করাও সম্ভব হতো না। আর এই H2O-কে জীবনধারণের উপযোগী তথা তরল করে রাখার কাজ করছে হাইড্রোজেন বন্ড। তাই হাইড্রোজেন বন্ডের গুরুত্ব বিবেচনা করে বলা যায়, হাইড্রোজেন বন্ডের অপর নাম জীবন।
H₂O এবং H₂S এর বন্ধন
১. H₂O (জল):
২. H₂S (হাইড্রোজেন সালফাইড):
H-বন্ধন
১. H₂O তে H-বন্ধন:
২. H₂S তে H-বন্ধন:
ভ্যানডার ওয়ালস বল
১. H₂O তে ভ্যানডার ওয়ালস বল:
২. H₂S তে ভ্যানডার ওয়ালস বল:
তুলনামূলক বিশ্লেষণ
বৈশিষ্ট্য | H₂O | H₂S |
---|---|---|
বন্ধনের ধরণ | পোলার সমযোজী বন্ধন | পোলার সমযোজী বন্ধন |
H-বন্ধন | শক্তিশালী, উচ্চমাত্রায় উপস্থিত | অনুপস্থিত |
ভ্যানডার ওয়ালস বল | দুর্বল | অপেক্ষাকৃত বেশি |
গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক | বেশি | কম |
Read more